মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগরে মুরাদ উদ্দিন (২৫) নামে এক যুবককে গাছের সাথে বেঁধে মধ্যযুগী কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে একদল নারী।
নির্যাতনে ওই নারীদের সহায়তা করেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ ও নারীদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। গত ২৫ এপ্রিল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ধলিরছড়া মুরাপাড়া এই ঘটনা ঘটে।
সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে দফায় দফায় পেটানো হয়েছে। পরে মোবাইল চুরির অভিযোগ দিয়ে তাকে পুলিশের সোপর্দ করা হয়েছে। তার পরিবারের লোকজন এই অভিযোগ করেছেন।
নির্যাতনের শিকার যুবক মুরাদ উদ্দীনের পিতা রশিদ নগর ধলিরছড়া এলাকার মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করে জানান, মোবাইল চুরির অপবাদের ঘটনাকে পুঁজি মেম্বার ফারুক আহমদ উপস্থিত থেকে এই নির্যাতন চালানো হয়েছে। এতে ইন্ধন রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমের। সম্প্রতি চেয়ারম্যান ও মেম্বার ফারুক মিলে নির্যাতিত মুরাদ উদ্দীনের পিতা মোহাম্মদ আলী জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করেন। কিন্তু রাস্তা নির্মাণ করতে দেয়া হয়নি। সেই ক্ষোভ থেকে চেয়ারম্যানের ইন্ধনে মেম্বারের উপস্থিতিতে তার পুত্রের এই বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে অভিযোগ করেন মোহাম্মদ আলী।
নির্যাতিত মুরাদ উদ্দীনের মা জানান, ইফতার সামগ্রী নিয়ে বড়বোনের বাড়িতে থেকে আসার পথে ওই এলাকার জেটিরাস্তা পুত্র রমজান, রমজানের মা, শাহীনা এবং স্থানীয় ছৈয়দ আহমদের পুত্র শাহ আলম, নবী আলম ও তার স্ত্রী হাসিনা, মিলে সকাল ৮টার দিকে মুরাদ উদ্দীনকে মোবাইল চোর বলে আটক করে। পরে তাদের বাড়ির উঠানের একটি গাছের সাথে তাকে বেঁধে ফেলে এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিটিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। মোবাইলটি রমজানই চুরি করেছেন। সে নিজে বাঁচতে মুরাদকে ফাঁসানো হয়েছে। মুরাদ এবং রমজান পূর্ব পরিচিত ছিলো- এমনটি জানান মুরাদের মা।
এদিকে মুরাদ উদ্দীনকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে কিল, ঘুষি, লাথি, হাতুড়ি, লাঠিসহ বিভিন্ন বস্তু দিয়ে তাকে সর্ব অঙ্গে বেধড়ক পেটাতে থাকে। সবাই পিটালেও তিনজন নারীকে বেশি পেটাতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় মেম্বার ফারুক আহমদ। তিনি আসার পরও পেটানো হয়। ভিডিওর এক পর্যায়ে দেখা যায়, যুবক মুরাদ উদ্দীনকে মুখে মুখোশ পরিয়ে দিয়ে পেটানো হচ্ছে। মোবাইল চুরির স্বীকার না করায় সারা দিন এভাবে বর্বর কায়দায় পেটানো হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এক পর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করতে তাকে বাধ্য হয়।
একদল নারী ও যুবক কর্তৃক এই যুবককে নিষ্ঠুর কায়দায় পেটানোর ঘটনার ভিডিওটি ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এই ভিডিও দেখে নেট দুনিয়ার সব মানুষ তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন এবং নির্যাতনকারী ওই মহিলাগুলো ও মেম্বার ফারুকসহ জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। সবাই বলছেন, অপরাধ করলেও আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে একজন মানুষকে এভাবে পেটানো চরম মানবাধিকার লক্স্ঘন। অন্যদিকে এই ঘটনা নিয়ে পুরো রশিদ নগরে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারাও এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান এবং মুরাদের মুক্তি দাবি করেছেন।
নির্যাতিত যুবক মুরাদ উদ্দীন পিতা মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে আমার ছেলেকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনে তার পায়ে, বুকে গুরুতর জখম হয়েছে। তারপরও চেয়ারম্যান ও মেম্বার ফারুক যোগসাজস করে সামান্য মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছে। তাকে চিকিৎসা না করিয়েই জেলে পাঠানো হয়েছে। আমি আমার ছেলেকে বর্বর নির্যাতনকারীসহ জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জন্য মাননীয় পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছি।
জানতে চাইলে নিজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রশিদ নগর ৮নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফারুক আহমদ। তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং তাকে না মারতে এবং বাঁধন খুলে বলি। কিন্তু নির্যাতনকারীরা বলে, তারা বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন এবং চেয়ারম্যানই বেঁধে রাখতে বলেছেন। এটা জানার পর আমি চলে আসি।
রশিদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, মুরাদ নামের যুবকটি একজন পেশাদার চোর। তবে চুরি করলেও আইন হাতে তুলে নিয়ে তাকে এভাবে পেটানো আইনী পরিপন্থী। যারা তাকে পিটিয়েছে তারা আমাকে সকালের দিকে জানিয়েছিলো মোবাইল চুরি করায় তারা মুরাদকে আটক করেছেন। আটক করলেও তাকে না মারার জন্য আমি নির্দেশ দিই। ওসি সাহেবের সাথে আলাপ করে বিকালের তাকে চৌকিদার পাঠিয়ে মুরাদকে এনে থানায় সোপর্দ করি। তখন জানতে পেরেছি তাকে খুব পেটানো হয়েছে। এটা জানলে আমি চৌকিদার পাঠাতাম না।
রাস্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তাটি মোহাম্মদ আলীরা খুশি হয়ে দান করেছেন। সেটার কাজ চলছে। এটার তার পিতার নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা নিয়ে তারা খুব খুশি।
এ ব্যাপারে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খাইর সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান চৌকিদার দিয়ে মোবাইল চোর বলে ওই যুবককে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। তার বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা রয়েছে। সেই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ। তবে তাকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওসি এবং হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন
পাঠকের মতামত: