বিশ্বজুড়ে দাবানলের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস। শুক্রবার পর্যন্ত এই ভাইরাসে ১৮৫টি দেশ বা অঞ্চলের মোট ২ কোটি ৭৫ হাজার ৯৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৪০২ জন। এছাড়া এই ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯১ হাজার ৯৫২ জন।
শুক্রবারও বুহ দেশে করোনায় আক্রান্ত শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে সবচেয়ে কঠিন দিন অতিক্রম করেছে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানসহ বেশ কিছু দেশ। কেননা এসব দেশে একদিনে সর্বেচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে।
একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
গত কয়েক মাসে চীন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে ঠিক একই রকম পরিস্থিতি এখন ইতালিতে। বরং চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যায় চীনসহ অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ২১। সেখানে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৮৬।
শুক্রবার সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। সেখানে মোট ৬২৭ জন মারা গেছেন। এটি একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে বিশ্বের কোথাও এমনকি করোনার সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত চীনের উহান শহরেও একদিনে এত মানুষ মারা যায়নি। ফলে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪ হাজার ৩২ জনে পৌঁছেছে। আর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছে ৫ হাজার ১২৯ জন। ইউরোপের দেশটিতে ৩৭ হাজার ৮৬০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজার ৬৫৫ জনের অবস্থা গুরুতর।
গত বুধবারই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যায় ইতালি। সেদিন সেখানে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৭৫ জন কোভিড-১৯ রোগী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটাই ছিল যেকোনও দেশের জন্য একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। শুক্রবার নিজেদের সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের বহু রাজ্যে লকডাউন
দেশটিতে শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত মোট ৫৭ জন মারা গেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর সেখানে এটিই যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। করোনা ঠেকাতে নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়াসহ অনেক অঙ্গরাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন দেশটির মোট ২৩ শতাংশ মানুষ।
স্পেন: ইতালির পর ইউরোপের আরেক দেশ স্পেনে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। শুক্রবার সেখানে নুতন করে মারা গেছেন ২৬২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৩৪৯৪ জন। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০৯৩ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১৫৭১য়ে গিয়ে পৌঁছেছে।
চীন: চীনে শুত্রবার নতুন করে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছে আরও ৪৭ জন। ফলে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ২৫৫ জন।
জার্মানি: ইউরোপের এই দেশটিতে শুক্রবার আরও ২৪ জন মারা গেছে। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০৯৩ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৪৮ জন।
ইরান: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে শুক্রবার করোনায় আরও ১৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে দেশটিতে সবমিলিয়ে ১ হাজার ৪৩৩ জন মারা গেলেন । এছাড়া মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৪৪ জন।
ফ্রান্স: ফ্রান্সে শুক্রবার আরও ৭৮ জন মারা গেছেন। ফলে সেখানে মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ালো সাড়ে ৪শ। এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৬১২।
যুক্তরাজ্য: সেখানে শুক্রবার আরও ৩৩ জন মারা গেছেন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯৮৩ এবং মৃত্যু ১৭৭।
পাকিস্তান: শুক্রবার সেখানে করোনায় আক্রান্ত আরও একজন মারা গেছেন। ফলে সেখানে মোট মারা গেলেন তিনজন। আর ভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫০১ জন।
সৌদি আরর: আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪৪। দেশটিতে করোনায় এখনও কেউ মারা যায়নি।
শুক্রবার করোনায় নতুন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে আরও বেশ কিছু দেশে। এদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১১, সুইজারল্যান্ডে ১৩, নেদারল্যান্ডে ৩০, বেলজিয়ামে ১৬, সুইডেনে ৫, ডেনমার্কে ৩, পর্তুগালে ২, জাপানে ২, ব্রাজিলে ৪, তুরস্কে ৫, গ্রিসে ৪, ইকুয়েডরে ৪, ইন্দোনেসিয়ায় ৭, মিশরে ১, পেরুতে ৩, ইরাকে ৪, হ্যাঙ্গেরিতে ৩, ক্রোয়েশিয়ায় ৫, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২ ও আলজেরিয়ায় ২ জন মারা গেছেন।
এছাড়া মালয়েশিয়া, ইসরায়েল, ভারত, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, সার্বিয়া, কোস্টরিকা, মরক্কো ও গুয়াডেলোপেতে একজন করে মারা গেছেন।
অপরদিকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২০ জন এবং মারা গেছে একজন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে তিনজন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর থেকেই চীনের বিভিন্ন প্রান্তে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত মাসে চীনের সীমান্ত পেরিয়ে করোনা ছড়াতে শুরু করে বিশ্বের অন্যান্ত প্রান্তে। চলতি মাসে এটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
ওয়ার্ল্ডোমেটার অবলম্বনে মাহমুদা আকতার
পাঠকের মতামত: