কক্সবাজার, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হলো রোহিঙ্গাদের তৈরী বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী

প্রেস বিজ্ঞপ্তি::

কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টি। এই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বালুখালীর ১০ নং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ অফিসের সামনে বসেছিল রোহিঙ্গাদের তৈরী বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনী।

গতকাল বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ‘পণ্য প্রদর্শনী মেলা’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন (ইপসা)। ব্যুরো অব পপুলেশান, রিফিউজিস এন্ড মাইগ্রেশান (বিপিআরএম) প্রকল্পের আওতায় আয়োজন করা হয় এই মেলা। এতে সহযোগিতা করে সেইভ দা চিলড্রেন বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৯ ও ১০ এর ৩০০  রোহিঙ্গার পোশাক, বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্প নিয়ে বসেছিল প্রদর্শনীর আয়োজন। ছয়টি স্টলে ঠাঁই পেয়েছিল রোহিঙ্গাদের তৈরী বাঁশের তৈরী লুই, ডুলা, টিস্যু বক্স, কলম দানিসহ বেশকিছু পণ্য। এছাড়াও ছিল কাপড়ের তৈরী হাতপাখা, কাথা, টেবিল ক্লথসহ বেশ কিছু পণ্য। রোহিঙ্গাদের ঘরের উঠানে চাষ হওয়া কিছু সবজিও প্রদর্শিত হয়েছে এ মেলায়।

মেলার শুরুতে সকাল সাড়ে এগারোটায় ছিল উদ্বোধনী আয়োজন। বিপিআরএম প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইপসা রোহিঙ্গা রেসপন্স প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক যীশু বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘পণ্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গাদের দক্ষতা সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’ এরপর প্রকল্পের কথামালা নিয়ে মঞ্চে আসেন ইপসা রোহিঙ্গা রেসপন্স প্রোগ্রামের প্রধান মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। তিনি পুরো প্রকল্প কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৭৭০ জনকে ১২০ দিন ধরে হাতে কলমে শেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭১০ জন পেয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং ৬০ জন পেয়েছে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সেইভ দা চিলড্রেনের বিপিআরএম প্রকল্পের প্রকল্প প্রধান মাহবুব হাসান। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা তরুণরা যাতে বিপথে না যায় সেজন্য এ বিপিআরএম প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি এই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বিপণনের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান সরকারের প্রতি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৯ ও ১০ এর ক্যাম্প ইনচার্জ সরওয়ার কামালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। ক্যাম্প ইনচার্জ সরওয়ার কামাল বলেন, ‘এ ধরণের উদ্যোগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মধ্যে হানাহানি কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যকার মারামারি বন্ধ করে তাঁদেরকে দক্ষতা উন্নয়নের আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বিপদে পড়ে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের সরকার ও বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের বুকে নিয়েছে। রোহিঙ্গারা যেখানে থাকে সেটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল। আমরা আশা করি রোহিঙ্গারা নিজেদের অধিকার নিয়ে মায়ানমার ফিরে যাওয়ার পর এই বনাঞ্চল আবারও তার পুরনো রূপ ফিরে পাবে।’

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইপসার ডেপুটি ডিরেক্টর (অর্থ) রোকসানা বেগম, ইপসার ফোকাল পার্সন মোহাম্মদ হারুন, সেইভ দা চিলড্রেনের টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ সাবিহা নাজনিন, মিল কর্মকর্তা শাহিকা আরবী, বিপিআরএম প্রকল্পের সকল কর্মকর্তা, ইপসা কর্তৃক বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাস্তবায়িত প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপকরা এবং ক্যাম্পে কর্মরত সকল ইউএন সংস্থা, আইএনজিও, এনজিও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এই দুই ক্যাম্প ছাড়াও ইপসার উদ্যোগে ক্যাম্প ৭, ১৫ ও ২১ এ রয়েছে পৃথক মেলার আয়োজন।

পাঠকের মতামত: