সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে একটি বিতর্কিত গল্প নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলে এনটিসিবির সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুইর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শরীফার গল্পে’ যদি বিভ্রান্তি থাকে তাহলে তা অবশ্যই সংশোধন করা হবে। এর আগে হেফাজতে ইসলামের প্রশ্ন ছিল, তাদের সঙ্গে আলোচনার পর সেই বিভ্রান্তি দূর হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছিল, কিন্তু সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের কথা আছে। এ বিষয়ে তো শিক্ষার্থীদের জানতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি আইনগতভাবেই স্বীকৃত। তারা এ দেশের নাগরিক।
প্রসঙ্গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার একটি গল্পের (শরীফার গল্প) পাতা জনসম্মুখে ছিড়ে ফেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে পাঠ্যপুস্তকের দুটি পাতা ছেড়েন তিনি।
বইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মাহতাব। এ সময় সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ টাকা দিয়ে বইটি বাজার থেকে কিনতে বলেন তিনি। পরে বইয়ের ট্রান্সজেন্ডারের গল্প থাকা দুটি পাতা ছিঁড়ে আবার দোকানে ফেরত দিতে বলেন।
ওই ঘটনার পর রবিবার (২১ জানুয়ারি) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাহতাব লেখেন, ‘আজকে আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে এইমাত্র ফোন করে জানানো হয়েছে যে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস নিতে না যাই। আমি জানি না হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত তারা কেন নিল। আমাকে কোনো কারণ তারা দেয়নি।’
পরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে দেন।
বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবার তা নিয়ে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলে এনটিসিবির সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা একটি ভিডিও দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
পাঠ্যক্রমে কোনো দুর্বলতা থাকলে তা পর্যালোচনা করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একটা পক্ষ আছে যারা সব সময় ধর্মীয় ইস্যু তুলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে থাকে। পাঠ্যক্রম এখন যা আছে, এর যদি দুর্বলতা থাকে তা পর্যালোচনা করা হবে। পরিবর্তন করা যাবে না এটা বলছি না, তবে যৌক্তিক কোনো পরিবর্তনের বিষয় থাকলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে।
মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, একটা সময় বই পেত না শিক্ষার্থীরা। ৩২ কোটিরও বেশি বই দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। করোনা ও ডলার সংকটের কারণে কাগজসহ প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে মান কমেছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে রয়েছে। নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে
যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: