কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে আলোচিত ১০ খুনের ঘটনায় ৬ জনের লাশ শনাক্ত হলেও ৪টি সংরক্ষণ করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। যাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তাদের দাবিকৃত চারজন আত্মীয়ের কারোরই লাশ মেলেনি। এর ফলে কক্সবাজার উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে।
পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় ৬ জনের মরদেহ শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ৪ জনের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় ডিএনএ নমুনা নিয়ে পাঠানো হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। শনিবার (৮ জুলাই) পরীক্ষার ফলাফল পুলিশের হাতে আসার পরেই এই ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মামলার তদন্ত কার্যক্রমের পরিধিও। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ২৩ এপ্রিল গুরা মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার সাগরে ভাসমান থাকা নামবিহীন ট্রলারটিকে নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসে। আর ওই ট্রলারের হিমঘর থেকে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল নামবিহীন ট্রলারটির মালিক নিহত সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
ঘটনার পর ১০ মরদেহের মধ্যে পরিচয় শনাক্ত হওয়া ৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ৬ জন হলেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে ট্রলার মালিক সামশুল আলম প্রকাশ সামশু, চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ, চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের মুসা আলীর ছেলে গণি ওসমান, একই ইউনিয়নের মোহাম্মদ হোসানের ছেলে নুরুল কবির।
কিন্তু অপর ৪টি মরদেহ সংরক্ষণ করে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। ওই সময় ৪ জনের মরদেহ শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪) বলে জোর দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলে মরদেহ ৪টি এদের কারও না বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, যে ৪ জনের মরদেহ বলে স্বজনদের পক্ষ থেকে জোর দাবি করা হয়েছিল, এগুলো তাদের কারও মরদেহ না। ওই সময় অতিরিক্ত কিছু স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এই ৩ জনই জেলে। তাদের বাড়ি মহেশখালীতে। তিন জনের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক না জানালেও দুর্জয় বিশ্বাস জানান, রোববার সকালে এই ৩টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। একটি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় পৌরসভার মাধ্যমে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
এর মধ্যে দিয়ে ঘটনার তদন্তটি নতুন মোড় নিয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় নিখোঁজ থাকা যে স্বজনরা ৪ জনের মরদেহ বলে জোর দাবি করেছিলেন, এই ৪ ব্যক্তি এখন কোথায়? জীবিত না মৃত? আর নতুন শনাক্ত হওয়া ৩ জন কি একই ট্রলারে করে সাগরে গিয়েছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর নতুন করে জানা জরুরি। তাহলে নিশ্চিত হওয়া যাবে ট্রলারটিতে ১০ জন মানুষ ছিল, নাকি তারও বেশি জন ছিল।
নতুন এসব প্রশ্ন নিয়ে মামলার তদন্তটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানান দুর্জয় বিশ্বাস।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান দিয়েছেন। তারা হলেন- মামলার এজাহারের প্রধান আসামি বাইট্টা কামাল, বাঁশখালীর বাসিন্দা ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ব মাঝি, মহেশখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খায়ের হোসেন, চকরিয়ার বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন মুনির, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সাইরার ডেইল এলাকার এস্তেফাজুল হকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন।
তবে গ্রেফতারের মধ্যে মামলার ৪ নম্বর আসামি করিম সিকদার ও বাইট্টা কামালের ভাই ইমাম হোসেন জবানবন্দি প্রদান করেননি।
পাঠকের মতামত: