কক্সবাজার, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

কোভিড-১৯ : দুই মাসে চীনের ক্ষতি ১৮৫০০ কোটি ডলার

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে কারণে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) চীনের ক্ষতি হতে পারে ১৮ হাজার ৫০০ কোটির ডলারেও বেশি। কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, ভোক্তা ব্যয় এবং পর্যটন খাতকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী এমন আশঙ্কার খবর প্রকাশিত হয়েছে।

২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আইএমএফ-এর সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা ঝু মিন আজ শনিবার এক অনলাইন প্রেজেন্টেশনে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে চীনের পর্যটন শিল্প আনুমানিক ৯০০ বিলিয়ন ইউয়ান ক্ষতির মুখে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও খাবার ও পানীয় খাতে এই ক্ষতির পরিমাণ হবে ৪২০ বিলিয়ন ইউয়ান। এদিকে শিক্ষা ও বিনোদন সেবার মতো খাতগুলোর অনলাইন ব্যয় অনেকে কমে যাবে। ফলে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের অর্থনীতি মোট ১ দশমিক ৩৮ ট্রিলিয়ন ক্ষতির মুখে পড়বে।

ঝু মিন বর্তমানে বেইজিংয়ে অবস্থিত শিংগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আজ শনিবার তিনি ওই অনলাইন প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস মহামারিতে চীনের আর্থিক ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে এসব আশঙ্কার কথা জানান।

jagonews24আইএমএফ-এর সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঝু মিন

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া হিসাব অনুযায়ী, এই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালে চীনের মোট খুচরা বিক্রির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ঝু মিন বলেন, ‘বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই ব্যয় হ্রাসের কারণে চীনের প্রবৃদ্ধি পয়েন্ট এক-চতুর্থাংশ কমতে পারে। আমাদের শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন প্রয়োজন এবং এর জন্য ১০ গুণ বেশি প্রচেষ্টা দরকার।

ভোক্তা ব্যয় হলো চীনা অর্থনীতির মূল ভিত্তি, যা ছিল গত বছর দেশটির প্রবৃদ্ধির প্রায় ৬০ শতাংশ। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর এখনও সেই লক্ষ্য অর্জন অনেক দূর পরাহত। তারপরও দেশটির অনেক স্থানীয় সরকার এরকম ব্যয়ের খাত হিসেবে বিবেচিত সিনেমা ও রেস্তোঁরার মতো স্থানগুলো পুনরায় চালু করতে চাচ্ছে না।

তবে ঝু মিনের দেয়া এই আনুমানিক হিসাবে দেশটির গাড়ি শিল্প বাদ পড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে চলতি মাসের প্রথম পাক্ষিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজারের দেশ চীনে অকল্পনীয় ধস দেখা দিয়েছে। এ সময়ে দেশটিতে গাড়ি বিক্রি কমেছে ৯২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চীনে গাড়ি বিক্রি কমেছে ৯৬ শতাংশ।

দ্য চায়না প্যাসেঞ্জার কার অ্যাসোসিয়েশন (সিপিসিএ) বলেছে, গত বছর চীনে ২ কোটি ১০ লাখেরও বেশি গাড়ি বিক্রি হলেও এবার তা প্রায় কমে দিনে গড়ে ৮১১টি গাড়িতে পৌঁছায়। তবে ভাইরাসটি ছড়ানোর আগেই মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে দেশটিতে গাড়ি বিক্রির পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। চীন হলো বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ির বাজার।

বেইজিংভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক চায়না সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জের প্রধান অর্থনীতিবিদ চেন ওয়েনলিং এই সপ্তাহে বলেছেন যে, চীনে ফেব্রুয়ারির শেষে জাতীয় উৎপাদন ৮০ শতাংশে ফিরে আসলেও বছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশেরও কম হবে।

ফরাসী ব্যাংক নাটিক্সিসের অর্থনীতিবিদরা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। তবে এটাও নির্ভর করছে প্রাণঘাতী ভাইরাস পরিস্থিতি কতটা স্থিতিশীল হবে এবং সরকারের উদ্দীপনা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে তার ওপর।সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

পাঠকের মতামত: