কক্সবাজার, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

বায়োমেট্রিক হাজিরার আওতায় আসছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও

মুজিববর্ষ পালনের বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে এই প্রথম গোপালগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সাড়ে চার হাজার শিক্ষকের পাশাপাশি এক লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী বায়োমেট্রিক হাজিরার আওতায় আসছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়োমেট্রিক হাজিরা বাস্তবায়ন হলে এই জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হাজিরা বাড়বে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ হবে, উপ-বৃত্তি প্রদানে অনিয়ম বন্ধ হবে, শিক্ষকরাও সঠিক সময়ে স্কুলে যাবেন। এছাড়া বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হলে কোমলমতি শিশুদের মাঝে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ারও একটা প্রবণতা তৈরি হবে।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানান, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের মধ্য দিয়েই সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার পর্যায় থেকেই সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ হাতে নিয়েছি আমরা। প্রত্যেকটি প্রাইমারি স্কুলে শিশুদের জন্য আনন্দঘন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আর এটিই হবে গোপালগঞ্জ থেকে মুজিববর্ষের বিশেষ উপহার।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাজিরা দেওয়া চালু হলে জেলার যে কোনও প্রাইমারি স্কুল চলাকালীন সময়ে ডিসি অফিসে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে বা সচিবালয়ে বসেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনিটরিং করতে পারবেন। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্কুলে বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। মুজিববর্ষের মধ্যেই আমরা এই পদ্ধতি চালু করতে চাই। এই পদ্ধতিতে জেলার সব প্রাথমিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাজিরা প্রদান কার্যক্রমকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়েই আমরা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে চাই। গোপালগঞ্জে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালু হলে এটি বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে মডেল হিসেবে কাজ করবে।’

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষ পালনের বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে এই প্রথম গোপালগঞ্জের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে বায়োমেট্রিক হাজিরার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আমন্ত্রণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করতে আসা ১৪টি কোম্পানির মধ্যে চারটি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতির আওতায় ২২ হাজার টাকায় প্রত্যেকটি স্কুলের সঙ্গে কোম্পানির চুক্তি সম্পাদন করে একটি করে বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন করার কথা রয়েছে। দুই লাখ লগ ক্যাপাসিটি ও পাঁচ হাজার ফিঙ্গার প্রিন্ট ক্যাপাসিটির দুই দশমিক আট ইঞ্চি এলসিডি মনিটরের এই বায়োমেট্রিক মেশিন অটোমেটিক সার্ভারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ৪ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপের এই বায়োমেট্রিক মেশিনগুলো কোম্পানি তিন বছরের ফুল ওয়ারেন্টি নিশ্চিত করে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে চালু করবে। এ পর্যন্ত জেলার ১০০ টিরও বেশি স্কুলে বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গ্রাম এলাকার বেশ কয়েকজন অভিভাবকদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে করপাড়া গ্রামের শাহ আলম মোল্লা, আড়ুয়া কংশুর গ্রামের রেঞ্জু বেগম, পশ্চিম করপাড়ার ইকবাল মোল্লা, মহাসিন ফকির, বনগ্রামের শিরিনা সুলতানা, শাহআলম মোল্লা, মধ্য করপাড়ার বদিয়ার মোল্লা, সোহরাব শেখ বলেন, বায়োমেট্রিক হাজিরা জেলার সব প্রাইমারি স্কুলে বাস্তবায়ন হলে এই জেলার সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর হাজিরা বাড়বে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ হবে, উপবৃত্তি প্রদানে অনিয়ম বন্ধ হবে। যে শিশুরা নিয়মিত স্কুলে যায় তারা উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। শিক্ষকরা সঠিক সময়ে স্কুলে যাবেন, ৯টার স্কুলে কেউ ১০টায় গিয়ে পার পাবেন না এবং বিকাল ৪টার আগে কেউ স্কুল ত্যাগ করতে পারবেন না। শিক্ষার্থীরাও সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে বাধ্য হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার নেশায় হলেও বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলে যেতে চাইবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ৮১ নং করপাড়া মধ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার রায়, ২২০ নং উলপুর পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামিম মাতুব্বর বলেন,  হাজিরা দেওয়া নিয়ে স্কুলগুলোতে কোনও সমস্যা হবে না। শিক্ষকরা নিজের তাগিদেই মেনে নেবেন। সব মিলিয়ে জেলার সব স্কুলে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হলে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক মানোন্নয়ন হবে এবং এটি বাংলাদেশের বাকি জেলাগুলোর জন্য মডেল হিসেবে কাজ করবে।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশের আর কোনও জেলায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হয়নি। গোপালগঞ্জেই আমরাই প্রথম একযোগে জেলার ৮৬২টি প্রাইমারি স্কুলে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালুর কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ১০০টিরও বেশি স্কুলে বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এই পদ্ধতি চালু হলে আমি আমার অফিসে বসেই জেলার যেকোনও উপজেলার যে কোনও স্কুলে মনিটরিং করতে পারবো।

কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে, কী কারণে স্কুলে আসেনি, কোন শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন, তিনি ছুটিতে আছেন কিনা বা কী কারণে আসেননি তা জানতে পারবো। শুধু আমি নই, জেলা প্রশাসক তার অফিসে বসেই, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে বা সচিবালয়ে বসেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গোপালগঞ্জ জেলার যে কোনও স্কুল মনিটরিং করতে পারবেন।

পাঠকের মতামত: