ভোটার তালিকা হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররা ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সেই সুযোগ পাচ্ছেন।
আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে নতুন ৮৫ হাজার ভোটার আসছেন বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আগামী ২ মার্চই তারা চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।
তাদের নিয়ে নতুন মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাছাইয়ে ভোট দেবেন প্রায় ১৯ লাখ ৮৯ হাজার ভোটার। রোববার যখন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় তখন বিদ্যমান ভোটার তালিকায় ভোটার ছিল ১৯ লাখ ২ হাজারের বেশি।
গত ১ জানুয়ারির মধ্যে ভোটারযোগ্য হওয়া ৮৫ হাজার ৮৪ জন এখন চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হালনাগাদ তালিকা যাচাই শেষে চূড়ান্ত করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আগের তালিকা বা নতুন ভোটারসহ তালিকা যেটাতেই নির্বাচন হোক আমাদের সব রকম প্রস্তুতি আছে। ইসি সিদ্ধান্ত জানালে সেই অনুসারেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
জানতে চাইলে ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, “২ মার্চ সম্পূরক তালিকায় যারা যুক্ত হবে সব নতুন ভোটারই সিটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। কেন্দ্রভিত্তিক সম্পূরক ভোটার তালিকা যথাসময়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র জমার সময় এরইমধ্যে শেষ হবে বিধায় নতুনরা ভোটে অংশ নিতে পারবেন না, তবে ভোট দিতে পারবেন।
এ নিয়ে কোনো আইনি জটিলতার শঙ্কা নেই বলে মনে করেন ইসির এই যুগ্ম সচিব।মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সিটি এলাকার ভোটার, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটার এবং বয়স ন্যূনতম ২৫ বছর হতে হয়।
ফরহাদ আহাম্মদ বলেন, “তফসিল যেহেতু ঘোষণা হয়েছে, সে সময় যারা ভোটার তারা নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু নতুনরা আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত হবেন ২ মার্চ। এরপরই তাদের ভোটাধিকার থাকছে।
৫ বছরে ভোটার বেড়েছে পৌনে ২ লাখ
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন এবং নারী ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন।
২০১৯ সালে হালনাগাদের আগে (এপ্রিলে) নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ২ হাজার ৮১১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬০ জন এবং নারী ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৫১ জন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান জানান, ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুসারে নগরীতে নতুন ভোটার হন ৮৫ হাজার ৮৪ জন।
এরমধ্যে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় (নির্বাচনী থানা) ১৭ হাজার ৭৫৪ জন, চান্দগাঁও থানায় ১১ হাজার ৪৭৬ জন, কোতোয়ালী থানায় ৯ হাজার ৯৬৭ জন, পাহাড়তলী থানায় ১১ হাজার ৯৫৩ জন, ডবলমুরিং থানায় ১৫ হাজার ৮৫৭ জন এবং বন্দর থানা এলাকায় ১৮ হাজার ৭৭ জন নতুন ভোটার হন।
এই খসড়া তালিকা প্রকাশের পর তা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব স্থানে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়।
পাশাপাশি ভুল সংশোধী ও সংযুক্তির জন্য আবেদনের সময় দেওয়া হয় ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময় নির্ধারণ করা আছে।
নতুনদের নিয়ে ২ মার্চ ভোটার দাঁড়াবে ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৮৯৫ জন। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভোটার বাড়ছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৬ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার চট্টগ্রাম সিটি ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারণে নতুন ভোটাররা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
ইভিএমে ভোট হওয়ায় উপস্থিতি বাড়ানোর দিকেও নজর রয়েছে ইসির। ভোট হবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পযন্ত।
মেয়র পদে ভোট হবে দলীয় প্রতীকে, আর কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয় প্রতীকে।
২০১৫ সালের ফলাফল
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মোট ৭১৯টি কেন্দ্রে হাতি প্রতীক নিয়ে নাছির পান ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম কমলা লেবু প্রতীকে পান ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট।
এ নির্বাচনে ৭১৯টি কেন্দ্রে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯টি ভোটের মধ্যে আট লাখ ৬৮ হাজার ৬৬৩টি ভোট বাক্সে পড়ে। ভোট পড়ার হার ছিল ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
এবার চট্টগ্রাস নগরীতে মোট প্রস্তাবিত ভোট কেন্দ্র ৭২১টি এবং বুথ সংখ্যা পাঁচ হাজার ১৪২টি। এবার ভোট হবে ইভিএমে।
পাঠকের মতামত: