কক্সবাজার, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

আগুনে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু, থামছে না স্বজনদের আহাজারি

অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের মহাজন পাড়ায় শোকের মাতম চলছে। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টায় ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন শ্মশানে তাদের সৎকার করা হয়। এ সময় মৃতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তাদের আহাজারি যেন থামছেই না।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

মৃতরা হলেন—মহাজন পাড়ার অটোরিকশাচালক খোকন বসাকের (৪২) বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললীতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকী বসাক (৩২), ছেলে শৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শয়ন্তী বসাক (৪)। এ ঘটনায় দগ্ধ খোকন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রাঙ্গুনিয়া
আগুনে মৃত ললীতা বসাক, কাঙ্গাল বসাক ও লাকী বসাক
মৃতদের সৎকারের সময় স্কুল মাঠে উপস্থিত ছিলেন কাঙ্গাল বসাকের দুই মেয়ে। ঘটনার সময় তারা ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। খবর পেয়ে তারা সকালে ছুটে আসেন। কাঙ্গাল বসাকের বড় মেয়ে অঞ্জনা শীল ও আরেক মেয়ে ঋণী দেব স্বজন হারানোর কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শুক্রবার বিকালে পারুয়া এলাকায় দেখা যায়, ভয়াবহ আগুনে খোকন বসাকের তিন কক্ষের সেমিপাকা ঘরটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। ঘরের পাশে রাখা পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিও পুড়ে গেছে।

কাঙ্গাল বসাকের বড় মেয়ে অঞ্জনা শীল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘একসঙ্গে আমার বাবা-মাসহ সবাইকে হারাবো তা ভাবতেও পারিনি। আমার মা-বাবা অসুস্থ ছিলেন। এই শোক আমরা কীভাবে সামলাবো!’

রাঙ্গুনিয়া-২
আগুনে পুড়ে গেছে বসতঘর
তিনি আরও বলেন, ‘আজ শনিবার আমার ভাতিজি শয়ন্তী বসাকের জন্মদিন ছিল। শুক্রবারের মধ্যে আমরা যাতে চলে আসি সেজন্য বাবা তাগাদা দিয়েছিলেন। আমরাও দুপুরের দিকে আসবো বলে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা আসার আগেই তারা চিরদিনের জন্য চলে গেলো।’

এদিকে বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ। তিনি মৃতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু রায়হান দোলন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মৃতদের সৎকার এবং পরিবারটির আর্থিক সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা হস্তান্তর করা হয়। অপরদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষে তার ব্যক্তিগত সহকারী একরামুল করিম রাশেদ আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগুনে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন খোকন বসাক। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগুন লাগার ঘটনাটি প্রাথমিক তদন্তে চুলার আগুন থেকে ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছে।’

উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, বসতঘরের জানালার গ্রিল কেটে আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত পাঁচ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুনে খোকন বসাকের অটোরিকশাটিও ভস্মীভূত হয়েছে।

অটোরিকশাচালক খোকন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেমিপাকা ঘরে বসবাস করতেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরটিতে বের হওয়ার দরজা ছিল মাত্র একটি। স্থানীয়দের ধারণা, রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন লেগে সেখানে মজুতকৃত বিপুল পরিমাণ কাঠের লাকড়ির মাধ্যমে তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসিসহ পুলিশ ফোর্স এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে।

চট্টগ্রাম জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে চুলার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। বসতঘর লাগোয়া রান্নাঘরে অনেক লাকড়ি মজুত ছিল। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বের হওয়ার দরজা ছিল মাত্র একটি। পরিবারের সদস্যরা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকায় আগুন লাগার বিষয়টি অনেক পরে টের পান। ঘরের সব দরজা বন্ধ থাকায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।’

পাঠকের মতামত: