পৃথিবীতে জলবায়ু সংকটের গুরুত্বপূর্ণ সব সংকেতগুলো দিনদিন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। জলবায়ু সংকটের ৩১টি সংকেতের মধ্যে ১৬টির অবস্থা করুণ৷
এরমধ্যে আছে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়া আর বরফখ্ডণ্ড ভেঙে যাওয়া। পরিবেশ বিষয়ক বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধীরে ধীরে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে, যেখান থেকে পৃথিবীকে ফিরে পাওয়া অসম্ভব।
প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড করছে পরিবেশ দূষণের সব অনুষঙ্গ। করোনা মহামারির কারণে সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে যখন স্থবিরতা নেমে আসে, তখন কার্বন নিঃসরণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু বায়োসাইন্সের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ আর ২০২১ সালে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন আর নাইট্রাস অক্সাইড নিঃসরণ রেকর্ড করেছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে গড়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ ছিল ৪১৬ পিপিএম। বায়ু দূষণের কারণে মানুষ মারাও যাচ্ছে।
২০১৫ আর ২০২০ সাল পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। গবাদি পশুর এমন ৪০০ কোটি ফার্মল্যান্ড আছে, যেখান থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস বের হয়।
ব্রাজিলের বন আমাজন ২০১৯ আর ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে। গেলো ১২ বছরের মধ্যে এই দুই বছরে ১০ লাখ হেক্টর বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে আমাজনের।
সমুদ্রের পানিতে এসিডের উপস্থিতিও গেলো কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। কোরাল রিফগুলো বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে কারণ সমুদ্রের পানি উষ্ণ হচ্ছে, অথচ কোরাল রিফের ওপর অন্তত ৫০ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। মানুষ খাবার, পর্যটন আর ঝড় থেকে রেহাই পেতে কোরাল রিফের ওপর নির্ভর করে।
তবে আশার কথা হলো, ২০২০ সালে শিল্প কারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার রেকর্ড পরিমাণে কমেছে লকডাউনের কারণে। কার্বন নিঃসরণ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
কার্বন নিঃসরণের আরেকটি অন্যতম কারণ খাবারের অপচয়। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবছর ৭৩ লাখ টন খাবারের অপচয় হয়। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ডলার।
অথচ পৃথিবীর মোট কার্বন নিঃসরণের ৮ শতাংশই আসে খাবারের অপচয় থেকে। শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, সারাবিশ্বে প্রতিদিন ১৩০ কোটি টন খাবারের অপচয় হয়, যেখান থেকে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে যায়। সারাবিশ্বে ৮১ কোটি মানুষ খালি পেটে বিছানায় যায়, যেখানে ২০০ কোটি মানুষ অতিরিক্ত খায়।
পাঠকের মতামত: