ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আঁতাতে একদল ভূমি দখলকারী ঘোড়াঘাটে দখলদারিত্বের রাজত্ব তৈরি করেছিল। স্থানীয়রা জানান, তাদের দাপুটে দখলদারীতে বাধ সাধেন ইউএনও ওয়াহিদা খানম। তিনি সহকারী কমিশনার ভূমি’র (এসিল্যান্ড) অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, স্থানীয় যুবলীগের নেতৃত্বে একটি দল এই ভূমি দখলের পেছনে রয়েছে এবং ঘোড়াঘাট আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।
পৌর মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, ‘পুরো ঘোড়াঘাট উপজেলা ভূমি দখলদারদের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয়।’
উপজেলায় এসিল্যান্ড’র পদটি গত ২৫ বছর ধরে খালি রয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে যোগদানের পর থেকে ওয়াহিদা খানম ভারপ্রাপ্ত হিসেবে এই পদের দায়িত্বও পালন করতেন।
পৌর মেয়র দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইউএনও ওয়াহিদা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে খুবই কঠোর ছিলেন। এ কারণেই হয়তো ভূমি দখলকারীরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে।
পৌরসভার করোনি এলাকার বাসিন্দা ফারুক সিদ্দিকী জানান, ইউএনও ওয়াহিদা তাকে পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করতে সহায়তা করেছিলেন। জমিটি তিনি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। অথচ, এই জমিটি দখলদাররা জোর করে প্রায় দখল করেই নিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে ভূমি দখলকারীরা গত এক বছরে বেশ কয়েকবার তার জমি দখল করার চেষ্টা করেছে এবং তার পরিবারের ওপরও হামলা করেছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে সরকারি বাসভবনে হামলা করা হলে ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা শেখ ওমর আলী গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনার একদিন পর র্যাব কর্মকর্তারা জানান, চুরি করার উদ্দেশ্যে ওই বাসায় ঢুকেছিল বলে হামলাকারীদের একজন স্বীকার করেছেন।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম গতকাল রোববার জানান, হত্যার উদ্দেশ্যেই ওয়াহিদার ওপর হামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চুরি কী? সেখান থেকে কিছুই হারায়নি। হামলাকারীরা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ওই বাড়িতে ছিল। তারা ওয়াহিদা ও তার বাবাকে কেন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করবে?’
ন্যায়বিচারের দাবি
গতকাল উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঘোড়াঘাটের সরকারি কর্মচারীরা। তাদের জোর দাবি, এটি চুরির ঘটনা নয়।
গতকাল বিকেলে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি আসাদুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
গত ৫ সেপ্টেম্বর মামলার অপর দুই আসামি নবিরুল ইসলাম ও সন্তু দাসকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ডিবি পুলিশের দিনাজপুর কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
‘তাকে বিদেশে পাঠানোর দরকার নেই’
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বলেছেন যে ইউএনও ওয়াহিদাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দরকার নেই।
তিনি বলেন, ‘এখন রোগী যে পর্যায়ে আছে তাতে বিদেশে প্রেরণের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় তখন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সোমবার (আজ) সকালে ইউএনওর ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ শেষ হবে। এখনো ইনফেকশনের লক্ষণ দেখা যায়নি। রোগী ভালো ব্যবস্থাপনায় আছে এবং সবকিছু ভালোভাবে চলছে। রোগীর চিকিৎসায় যা যা দরকার সব দেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইউএনও ওয়াহিদা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার মনে হয়েছে উনি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় আছেন। আট জন চিকিৎসক সফলতার সঙ্গে তার অপারেশন করেছে। ইউএনও ওয়াহিদার ডান দিকের অংশটা এখনো অবশ আছে। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন ফিজিক্যাল থেরাপি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা ভালো হয়ে যাবে।’
পাঠকের মতামত: