নিজস্ব প্রতিবেদক::
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জনপদ উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাস। সরকার ১৭ মার্চ থেকে দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সতর্কতা জারির পর থেকে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্প গুলোতে।
বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ার জন্য প্রশাসন বা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি এনিয়ে কোন আলোচনাও করেনি।
যদিওবা ইউএনএইচসিআর করোনা প্রতিরোধমূলক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতাদের নিয়ে আলোচনা সভার আশ্বাস দিয়েছিল। তা কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।
তবে উপজেলা প্রশাসন বলছেন, করোনা ভাইরাস থেকে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় সতর্কতা মূলক মাইকিং করা হচ্ছে এবং হাসপাতাল ও ক্যাম্পের বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালালের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইসোলেশন সেন্টারে পরিণত করেছে। তারা বলছে যদি কোন রোহিঙ্গা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগ করে তাহলে তারা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেবে।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ নুর জানায়, করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে রোহিঙ্গারা
অজ্ঞ। পাশাপাশি অপরিচ্ছন্ন আবাসন ও তাদের নিত্য নৈমিত্তিক জীবন যাপন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ওই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ক্যাম্পে যদি কেউ আক্রান্ত হয় তা হলে মুহুর্তেই তা ছড়িয়ে পড়বে। যেহেতু এখানে সীমিত জায়গার উপর বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস।
তাই এব্যাপারে ক্যাম্পে সচেতনতা মূলক সভাসমাবেশ বা স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সর্তকতা মূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হলে তা হলে এবিষয়ে রোহিঙ্গারা সর্তকতা অবলম্বণ করে নিজেকে করোনা ভাইরাস মুক্ত রাখতে সম্ভব ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টার দিকে উখিয়া প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিনা আকতার মরজু সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটি আল্লাহর গজব বলে প্রচার হলেও এব্যাপারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বেশি।
তিনি করোনা সর্তকতার ব্যাপারে কোন ধরনের গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য সংবাদকর্মী সহ
সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আরো বলেন, সরকারের ঘোষিত সর্তকতা কর্মসূচীর সাথে আল্লাহর উপর ভরসাই হবে করোনা থেকে বাঁচার সবচাইতে বড় উপায়।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে “আতংক গুজব ভয় নয়, সচেতনতাই প্রতিরোধে সবোর্ত্তম উপায়” শিরোনাম সংক্রান্ত পেষ্টুন লাগানো হচ্ছে উখিয়ার বিশেষ বিশেষ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, করোনা সর্তকতায় সরকারের ঘোষিত কর্মসূচীর সাথে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সর্তকতা নিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা গুলোর সাথে কথা বলে প্রয়োজনে করোনা আক্রান্তদের জন্য আলাদা হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেকোন ধরনের সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার সর্তক করা হচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং গোটা উখিয়া উপজেলায় মাইকিং করে করোনা ভাইরাস থেকে সর্তক থাকতে বিভিন্ন প্রকার দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে, সহকারি আরআরআরসি শামশুদ্দোহা নয়ন বলেন, উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বড় ধরনের যে কোন সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এনজিও সংস্থাগুলোর হাসপাতালগুলোকে সর্তক অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়াও যেসব বিদেশী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমূহে আগে থেকে কাজ করে আসছেন তারা ব্যতীত নতুন কোন বিদেশী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত: