প্রেমিকের কাছে কক্সবাজারে পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিল মোবারেকা বেগম। কিন্তু সেই অনুমতি চাইতে গিয়ে নিভে গেছে তার জীবন প্রদীপ। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রেমিক সালাউদ্দিনের ছুরিকাঘাতের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি বায়েজিদ থানাধীন অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে একটি ভাড়া বাসায় মোবারেকা বেগমকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই/তিনদিন পর তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় বায়েজিদ থানায় একটি মামলা হয়। চন্দনাইশের বৈলতলী ইউনিয়নের জাফরাবাদ এলাকার সাবেক মেম্বার আলী আসকরের ছেলে মো. সালাহ উদ্দীন (৪০) ৩ সন্তানের জনক। সে নগরীর অক্সিজেন এলাকায় ফলের ব্যবসা করতো। অপরদিকে কুতুবদিয়ার মোবারেকা বেগম (২২) বায়েজিদেই একটি গার্মেন্টস কাজ করতো। সালাউদ্দিনের সাথে ৩ বছর পূর্বে থেকে মোবারেকার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত মাসে তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। গত সোমবার পুলিশ ওই খুনে জড়িত একমাত্র আসামি সালাউদ্দিনকে চন্দনাইশ দোহাজারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে বলে আজাদীকে জানান নগর পুলিশের বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার পরিত্রান তালুকদার। এসি পরিত্রান জানান, সোমবার তাকে গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতে তোলা হলে সে খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তিনি বলেন, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে এই খুনের ঘটনা ঘটনা ঘটিয়েছে। আসামি সালাউদ্দিনের সাথে ওই নারীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানান তিনি।
বায়েজিদ থানার ওসি প্রিটন সরকার আজাদীকে বলেন, আসামি সালাউদ্দিন ফল ব্যবসা করতেন। সে বিবাহিত। তার বৌ-বাচ্চা রয়েছে। বিবাহিত হওয়ার পরও সে মোবারেকা বেগম নামে ওই নারীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময় সালাউদ্দিন তাকে টাকা-পয়সা দেওয়ার পাশাপাশি ওই নারীর বাসায় যেতেন। ঘটনার দিন তাদের মধ্যে পিকনিক যাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে এই খুনের ঘটনা ঘটে বলে জানান ওসি প্রিটন। গতকাল মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সালাউদ্দিন জানান, ঘটনার দিন রাত ১০টায় প্রতিদিনের মতো তরল দুধের প্যাকেট পৌঁছে দিতে মোবারেকার বাসার সামনে যায়। সেখানে পৌঁছে তার বাসার সামনে দু’জনে কথাবার্তা বলেন। এক পর্যায়ে মোবারেকা তার অফিস থেকে দু’দিনের জন্য কঙবাজারে পিকনিক যাওয়ার কথা বলে সালাউদ্দিনকে। তখন সালাউদ্দিন তাকে পিকনিকে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করেন।
এ সময় মোবারেকার হাতে শসা ও একটা ছুরি ছিল। সেটা দিয়ে সে শশা খাচ্ছিল। কথাবার্তার একপর্যায়ে মোবারেকা সালাউদ্দিনকে বলে তাকে পিকনিকে যেতে না দিলে ছুরি মেরে দিবে। পরে চাকু নিয়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। হাতাহাতির এক পর্যায়ে অসাবধানতাবশত মোবারেকার পেটে ছুরি ঢুকে যায় বলে জবানবন্দিতে জানায় সালাউদ্দিন। জবানবন্দিতে সালাউদ্দিন আরও বলে, চাকু পেটে ঢুকার পর সে মাটিতে পড়ে যায়। তার পেট থেকে রক্ত ঝরছিল। তখন সালাউদ্দিন ভয়ে তাকে সেখানে রেখে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
এ ঘটনায় নিহত মোবারেকার ছোট ভাই মো. বোরহান উদ্দীন বাদী হয়ে বোনের প্রেমিক সালাহউদ্দীনকে আসামি করে বায়েজিদ থানায় একটি হত্যা মামলা করে।
সালাউদ্দিন জবানবন্দীতে বলেন, আমি তাকে অনেক ভালোবাসতাম। আমি তাকে মারতে চাইনি। দুর্ঘটনাবশত তার পেটে চাকু ঢুকে যায় বলে জবানবন্দিতে জানায় সালাউদ্দিন। সালাউদ্দিনের সাথে মোবারেকার সম্পর্কের কথা তার পরিবারের লোকজনও জানত।
পাঠকের মতামত: