কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্রামবাসীর মূখে হাসি

উখিয়ায় হারিয়ে যাওয়া মাছকাইজ্জা বিল ফিরে পাচ্ছে আপন রুপে

ফারুক আহমদ, উখিয়া::
উখিয়া উপজেলার রাজা পালং ইউনিয়নের    ঐতিহ্যবাহী মাছকাইজ্জা বিল ফিরে পাবে হারানো গৌরব। সময়ের বিবর্তনে নব্বই   দশকের দিকে  হারিয়ে যেতে  শুরু করে এ খালটি।  অথচ মাছকাইজ্জা খাল, যা এক সময় দেশীয় প্রজাতীর প্রাকৃতিক মাছ ও জলজ জীববৈচিত্রের অভয়ারণ্য বলে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে একশ্রেণীর মানুষের দখল জবর দখলের কারণে নিশ্চিহ্ন পরিণত হয়।
  বর্তমানে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনের ফলে পাহাড় কাটা মাটি, বালি এসে বিল ভরে গেছে, বর্ষামৌসুমে তৈরী হয় জলাবদ্ধতা। পার্শ্ববর্তী ফলিয়াপাড়া, মাছকারিয়া, মোহাম্মদ আলী ভিটা, শিলের ছড়া, মধুরছড়া ও লাম্বাসিয়া গ্রামের সাধারণ গ্রামবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবী মাছকাইজ্জা খাল পূন:খনন করা। কিন্তু    স্বার্থান্বেসী মহলের অপতৎপরতায়  খাল পুনঃখনন  প্রকল্প টি আলোর মুখ দেখেনি।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও পরিবেশ  বিষয়ক  উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সিএনআরএস’র  যৌথ ভাবে   জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ পুন:উদ্ধার কার্যক্রমের আওতায়  মাছ কাইজ্জা খাল পুন:খনন, কাজ শুরু করে। তাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য হচ্ছে  হারিয়ে যাওয়া খালটি পূর্ণঃ  খননের মাধ্যমে দেশীয় মাছের প্রজাতি রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য অভয়াশ্রম সৃষ্টি করা।
সিএনআরএস সংস্থার ম্যানেজার গোলাম কিববিয়া সাংবাদিকদের জানান , উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শ এবং সহকারি কমিশনার ভূমি দেয়া ট্রেস ম্যাপ অনুযায়ী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ভরাট হয়ে হারিয়ে হওয়া খাল পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়। তিনি আরো বলেন ২ হাজার ২০ বর্গফুট  দৈর্ঘ্য, ১৮ ফুট প্রস্ত ও ৮ ফুট গভীরতা করা হচ্ছে।  স্থানীয় চাষিরা  ও কৃষক পরিবার তারা নিজেরাই এসে উৎসবমুখর পরিবেশে এই খাল খননে  হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন   ।
স্থানীয় গ্রামবাসী আমীর আলী (৬৪) ছৈয়দ মিয়া (৬৬) নূরুল ইসলাম (৩২)  কৃষক  ছৈয়দ নূর (৫৫)   মৎস্যজীবি আবদুর রহিম (৫৩) জানান খালটি  ভরাট হওয়ায় বর্ষার মৌসুমে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় চাষাবাদ নষ্ট হয়ে  অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হয়। এমনকি বিভিন্ন প্রজাতির মাছও বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। সবাই এক বাক্যে বলেন    খাল খননের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী পূরণ হতে চলেছে।  তাদের ভায্য একদিকে তারা খালের পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিতে পারবে সেইসাথে সারা বছর খালের পানিতে মাছ ধরতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে উপজেলা ভূমি   অফিস কর্তৃক মাঠ জরিপ পরিচালিত হয় এবং প্রকৃত খাল চিহ্নিত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরামর্শক্রমে খাল খনন   কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রকল্প সুত্রে যানা যায়, খাল পুন:খননের প্রাক্কলিত ব্যয় দশ লক্ষ টাকা। যা খাল পুন:খনন, লেভেলিং, ড্রেসিং ও খালের পাড়ে ঘাষ লাগাতে  এ অর্থ  করা হবে। ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী গ্রাম সমূহে সাধারণ সভার মাধ্যমে প্রতিনিধি মনোনয়ন করে খাল ও মৎস্য অভয়াশ্রম’র টেসকই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিনিধি মনোনয়ন সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জন গুরুত্বপূর্ণ হারিয়ে যাওয়া খালটি খনন  কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অনেকের সাথে কথা বলে   জানা যাচ্ছে, এখনো থেমে নেই ভ‚মিদস্যুদের অপতৎপরতা। সরজমিন কথা বললে গ্রামবাসীরা জানান স্বার্থান্বেসী মহলের অপতৎপরতায় যেন থেমে না যায় এই মহতি উদ্যোগ।তাদের দাবি যে কোন মূল্যে খালটি খনন কাজ সম্পন্ন করা হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ  নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার দ্বারা খাস জায়গা শনাক্ত করে ভরাট হওয়া খালটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান পূর্ব থেকে এখানেই খাল ছিল। জনগণের দাবি ছিল খালটি খনন করা হউক। স্থানীয় চাষি  ও গ্রামবাসীদের দাবি অনুযায়ী খালটি খনন করা হচ্ছে।  এটি হলে বর্ষা এবং শুষ্ক মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে এবং স্থানীয় চাষীরা ফসল উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পাঠকের মতামত: