কক্সবাজার, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

দখিনা বাগানে মৌমাছি নেই : আলমগীর মাহমুদ

মৌমাছিহীন বাগান পাহারায় রয় পেটপূঁজারীরা। ভাগ্যের নির্মমতায় আমিই সে দলের প্রভাবশালী সদস্য। প্রেমিক হয়ে এসেছিলাম। জীবন যৌবন মাঝ সাগরে। দূর থেকে খেয়ালে রইলে বাতি জ্বলছে জ্বলছে, দূরের কোন নৌকায়। পথিকের ভাবনা ”মাছ ধরার বোট মাছ ধরছে বুজি..!

বাস্তবে কাউরে ঠাহার করিতে না পারানোর যে কৌশল তাহ কাউরে বুঝতেও দিতে পারছি না। বুঝলেই আমার বিভাগীয় প্রধানের পিঁড়িখানা হগলে মিলিয়া কাড়িয়া লইবে।

একসিডেন্টের সাথে সাথে উত্তেজিত জনতা দোষগুণ ভাবনাহীন রয় সব দোষ ড্রাইভারের। উত্তম মধ্যম বনে কপাল লিখন।

রাস্তায় দাঁড়ানো বিচারহীন মানুষটিই তখন এজলাসের বিচারকের মতো রায় দিতে রয়, গালমন্দ করতে রয়। শুধু শুধু মনঃতাপ নেভায় কিল, ঘুষি, মুটকিতে। আমিও আছি এমন দশায়। কাউরে কইতেও পারছি না, সইতেও পারছি না। যতই লুকাই ততই হারছি আর হারাচ্ছি।

দুই এক কিলে ভাল মানুষের ইজ্জত যায় না ভাবিয়া সত্য সাহস করিয়া আপনাগোরে কইয়া গেলাম। “রোয়াইঙ্গা আসার পর দখিনের স্কুল, কলেজগুলোতে আপনাগো ছেলেমেয়েরা মধু সংগ্রহ করিতে আসে না। সবাই যেন কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই!

আরাকান রোডের বাড়ীতে চেপে কলেজের অট্টালিকায় চোখ পড়তেই তারপরও আপনার বুক ফুলিয়া ফ্যাপিয়া উঠে। ভাবনায় কয়, মাশাল্লাহ আমার ছেলেমেয়েরা রোয়াইঙ্গা ক্যাম্পে ৪০ থেকে ৮০ হাজার মাইনার চাকরি ও করে এই কলেজেও পড়ে। কামাইও হইবে, বিএ/বি,এ অনার্স ডিগ্রিও হইবে।

ষ্টেশনের কম্পিউটারে বানানো সার্টিফিকেটের বিএ/ এম, এ.. পাশে N.G.O চাকরি, আসল সার্টিফিকেট আসিবে যখন, নগদ নারায়ণও থাকিবে তখন—টেকায় কে !

দখিনের মা, বাবার ভাবনা আজ ছেলেরে মানুষ করা নয়, সার্টিফিকেটধারী করা । জ্ঞান, স্কুল কলেজের পাঠ তার নিকেশে নেই ! এমন চিন্তায় দখিনের পাঠশালাগুলো বনে আছে উপস্থিতিহীন সার্টিফিকেটের কারখানা।

ছাত্র শিক্ষক নেই, চেনাজানাও। পরীক্ষা পাশে প্রতিষ্ঠানে/ গুরুগৃহে মিষ্টান্ন সে যেন নয় আজ আর্শীবাদের! অনর্থক অপচয়, অপব্যয়ই! কথাটা কেউ নাড়াচাড়া করিলে উত্তর আসে ‘ এখন কি আর ঐ যুগ আছে ?

গবেষক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী ঘরনার ছাত্রছাত্রীর আশায় সন্মান শ্রেণি খোলা হয়। ধার্য ৫০ জন। কাগজে ৫০ জনই , বাস্তবে মেলে না তাদের দেখা।

কোথায়? রোয়াইঙ্গা ক্যাম্পের চাকরীতে। প্রেসারে রাখলে কয়, ৪০-৮০ হাজার বেতন কি স্যারেরা পায়? আমাদের ইনকাম স্যারদের সহ্য হচ্ছে না। বহুতভেবেই আমরা পড়ালেখাটারে রেখেছি ‘অবসনাল’।

৬০% উপস্থিতির কথা বিধিতে আছে। এইকারনে পরীক্ষায় বসতে না দিলে দিব না। জরিমানার বিধানে ছাড়া পেলে মহাখুশি।

পড়ালেখা চাকরি সহবস্থানে রেখে চাকরীর বন্ধের দিন এরপর একদিন সপ্তাহে দু’দিন আসতে প্রেষণায়ও আসছে না সুফল।

ফাইনাল পরীক্ষায় ড্রপ দিয়ে যায় N.G.O নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে। প্রজেক্ট শেষ মোবাইল নিয়ে পড়ে রয় আসেনা পাঠশালায়। চাকরি করে না তারাও পাঠশালা বিমূখ। আবার অনেকে পাঠশালায় আসলেও ক্লাসে বসছে না।

মাধ্যমিকের পাওয়া তথ্য আরো রম্য। S.S.C ফেল করে দ্বিতীয়বারের কথা বলছে না তারা। বলছে ফেল করছি কি অইছে আই,এ বিএ পাশই বনব , সাড়ে তিন শ টাকায় আই,এ/ বি, এ সার্টিফিকেট দখিনের কম্পিউটারের দোকানে পাওয়া যায়। রোয়াইঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করব।

করোনা ভাইরাস চীনকে করেছে অচিন। রোয়াইঙ্গা ভাইরাস উখিয়া টেকনাফের পড়ুয়াদের মেধা মননকে করেছে হুশহীন। ভাবছে শুধু ”টিঁয়া থাইলেই মিয়া”!

যখন কক্সবাজারের মাটিতে পাওয়া গেছে আণবিক বোমার উপাদান ইউরেনিয়াম। নৈসর্গিক নিসর্গ খনিজের এই এলাকাটি যখন বিশ্বের উন্নত মানুষের আকাঙ্খার ধন বনছে ঠিক সে সময়েই এই মাটির প্রজন্মরা ছাড়ছে স্কুল, কলেজ , জ্ঞান, গরিমা, গুরু, গবেষণা —বিষয়টি ভাববার, গবেষণার..!!

লেখকঃ

বিভাগীয় প্রধান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,উখিয়া কলেজ। উখিয়া কক্সবাজার।alamgir83cox@gmail.com

পাঠকের মতামত: