শফিউল্লাহ শফি :
কক্সবাজারের ট্রাফিক ব্যবস্থা সামাল দিতে না পেরে কক্সবাজার ছাড়তে চান নবাগত পুলিশ সদস্যরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ শহরের প্রধান সড়ক ও পর্যটন এলাকায় লেগেই রয়েছে দীর্ঘ যানজট।
রাস্তার কোথাও তিলধারণের জায়গা নেই। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স কিংবা জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া মানুষগুলোর কষ্টের সীমা নেই।
স্থানীয়দের মতে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুরো জেলা পুলিশকে রদবদল করা হয়। আর যারা কক্সবাজারে নতুন যোগদান করেছেন তারা এখানকার রাস্তাঘাট চিনেন না। পাশাপাশি কক্সবাজারের জন্য তারা অনভিজ্ঞ। যে কারণে তারা যানজট নিরসন বা সমস্যা সামাল দিতে পারছেন না। ফলে অসহায়ের মতো হাই-হুতাশ করে দায়িত্ব পালন করছেন নতুন যোগদান করা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
এ বেহাল অবস্থা নিরসন করতে না পেরে খোদ কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ কক্সবাজার থেকে বদলি হতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ আমজাদ হোসেন বলেন, ট্রাফিক বিভাগের কোনো সদস্যই কক্সবাজারের কোনো স্পট চিনেন না। পাশাপাশি রাস্তার বেহাল অবস্থা। যে কারণে কোথায় কোন সময় যানজট লাগছে, তা চিহ্নিত করতে এবং নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি আমি (ট্রাফিক ইনচার্জ) নিজেও বদলি হওয়ার তদবিরে আছি। এ বেহাল পরিস্থিতিতে কাজ করা যাবে না। আগে যারা ছিলেন তারা ভালো ছিলেন।
সরেজমিন দেখা যায়, শহরের বাসটার্মিনাল থেকে শুরু করে বাজারঘাটা হয়ে বিলকিস মার্কেট পর্যন্ত হরেকরকম যাত্রীবাহী গাড়ির দীর্ঘ সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগেই রয়েছে যানজট। একই চিত্র পর্যটন এলাকার কলাতলীতেও। এ যানজটের শিকার অতীতে কখনও হয়নি বলে দাবি কক্সবাজার শহরবাসীর।
শহরের বাজারঘাটার ব্যবসায়ী হুমায়ন কবীর জানান, কক্সবাজার থেকে একযোগে সব পুলিশ সদস্য বদলির খেসারত দিতে হচ্ছে কক্সবাজারবাসীকে। যারা নতুন যোগদান করেছেন তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ তারা অপকটে স্বীকার করছেন তারা কিছুই চিনেন না। পাশাপাশি কক্সবাজারের লোকজনের ভাষাও অনেকেই বোঝেন না। সুতরাং এ সিদ্ধান্তটি অনেকটা সঠিক হয়েছে বলে মনে হয় না।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে শহরে শুধু যানজট নয়। একই সঙ্গে চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে গেছে। আর সব দেখেই অসহায়ের মতো দর্শকের ভূমিকায় থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কক্সবাজারে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
টেকনাফ প্রতিনিধি নুরুল করিম রাসেল জানান, টেকনাফের ব্যস্ততম পৌরসভার সড়কে ভয়াবহ যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকার কারণে সাধারণ লোকজনের পাশাপাশি কর্মজীবী লোকজনও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
পাশাপাশি নানা রোগে আক্রান্ত কক্সবাজারমুখী মানুষ ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেস এবং পর্যটকসহ হাজার হাজার সাধারণ যাত্রীর চরম ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না। মূলত নতুনভাবে যেসব ট্রাফিক পুলিশ টেকনাফে যোগদান করেছেন তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে এবং এলাকা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা না থাকায় এ বেহাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান টেকনাফবাসী।
টেকনাফ প্রতিনিধি আরও জানান, টেকনাফ পৌরসভার অলিয়াবাদের শাপলা চত্বর সড়ক ও পুরাতন জিপস্টেশন, সাবরাং-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক এবং টেকনাফ পৌরসভার হাইস্কুল রোড থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে যানজটের চিত্র ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
একই চিত্র চকরিয়া এবং উখিয়ায়। উখিয়া প্রতিনিধি শফিক আজাদজানান, উপজেলার কুতুপালং, কোর্টবাজার ও উখিয়া স্টেশনের যানজটের চিত্র বলাইবাহুল্য। এরকম যানজট অতীতে কখনও দেখা যায়নি। যানজটে পড়ে মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উখিয়াবাসীর দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সমস্যার সমাধান জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে এ উপজেলায়। নতুন পুলিশ সদস্যরা এলাকা না চেনার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানান অপরাধ কর্মকাণ্ড।
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ আমজাদ হোসেন বলেন, ভাই আমরা পারছি না। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে সিনিয়র অফিসারদের বলেন। আমরা হিজিবিজি অবস্থায় পড়ে গেছি এবং অসুস্থ হয়ে গেছি।
পাঠকের মতামত: