কক্সবাজার, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শাবনূরের কারণেই আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ!

চিত্রনায়িকা শাবনূরের কারণেই জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন, এমনটাই দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংস্থাটি। এ সময় সেখানে একটি স্লাইড শো দেখানো হয়।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকা শাবনূর। তিনি বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে এমন কথা কেন বলা হচ্ছে, তা আমি জানি না! সালমান ও আমাকে জড়িয়ে এই ধরনের কথা কেউ যদিও বলে থাকে, সেটার আমি ঘোর বিরোধিতা করছি। সালমান শুধুই আমার নায়ক ছিল, সহশিল্পী ছিল, বন্ধু ছিল, এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক ছিল না।‘

স্লাইড শোতে পিবিআই দেখায়, ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যায় এফডিসির ডাবিং থিয়েটারে ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবির ডাবিং চলাকালে সালমানের স্ত্রী সামিরা উপস্থিত হন এবং সালমান ও শাবনূরকে ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখেন। ডাবিং থিয়েটারে সালমান ও শাবনূরকে ঘনিষ্ট অবস্থায় দেখে সামিরা রাগ করে ডাবিং থিয়েটার থেকে বের হয়ে যান। ঘটনার আগের রাত অনুমান ১১টা ৩০ ঘটিকার সময় সালমান শাহ এর মোবাইলে চিত্রনায়িকা শাবনূরের  নিকট থেকে একটি ফোন আসে। সালমান শাহ কথা বলতে বলতে বাথরুমের ভেতরে ঢুকে যান। সালমান শাহ চিৎকার করে বলেছিল যে, তাকে যেন আর ফোন দেওয়া না হয়।

আরও দেখানো হয়, রাত ১২টার দিকে সালমান শাহের ফোনে আবার কল আসে। তখন সালমানের স্ত্রী সামিরা রাগ করে বাসা থেকে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিচতলার লবিতে যান। সালমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল হোসেন খান বাসায় ফিরে আসার জন্য সামিরাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তখন সামিরা বাসায় ফিরে আসেন। বাসায় ফিরে তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন।  রাত ১২টা ১৫ মিনিটে সালমান শাহের মোবাইলে শাবনূরের কাছ থেকে আবার কল আসে। শাবনূরের কল এসেছে দেখতে পেয়ে সালমান শাহ তার সিটিসেল ফোনটি মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। এ ছাড়া শাবনূরের উপহার দেওয়া ফ্যানটি মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। পরদিন সকালে সালমানের বাসার কাজে সাহায্যকারী মনোয়ারা ভাঙা ফ্যান ময়লা ফেলার ঝুড়িতে রাখেন। সালমানের বাবা কমর উদ্দিন সকাল সাড়ে ৯টায় সালমানের বাসায় আসেন। সামিরা তার শ্বশুরকে চা-নাস্তা খেতে দেন।

পিবিআইয়ের স্লাইড শোতে দেখানো হয়, ঘটনার দিন সকালে সালমান শাহ ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরের সামনে কাজে সাহায্যকারী মনোয়ারার কাছে পানি চান। মনোয়ারা মগ দিয়ে পানি দেন। সালমান শাহ এক মগ পানি পান করে মনোয়ারার কাছে আরেক মগ পানি চেয়ে পান করেন। পরে মালি জাকির কলিংবেল বাজায়। সালমান শাহ নিজেই দরজা খুলে দেন। মালি জাকির সালমান শাহর কাছে বকেয়া তিন মাসের বেতন চান। সালমান শাহ কোনো কথা না বলে বাসার ভেতরে চলে যান।

স্লাইড শোতে দেখানো হয়, পরবর্তীতে সালমান শাহ দারোয়ান দেলোয়ারকে ইন্টারকমে ফোন করে বলেন যে, তার বাসায় যেন কাউকে আসতে দেওয়া না হয়। এরপর বেড রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সালমান শাহ তার স্ত্রী সামিরার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে ছিলেন। সামিরা তখন বিছানায় আধ-শোয়া অবস্থায় টিভি দেখছিলেন। তখন সামিরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী দেখছো?’ সালমান শাহ কোনো কথা না বলে বাথরুমে যান। বাথরুম থেকে বের হয়ে তিনি ড্রেসিং রুমে প্রবেশ করেন এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন।

পিবিআইয়ের স্লাইড শোর ক্যাপশনে আরও দেখানো হয়, কাজের সাহায্যকারী ডলি তার ছেলে ওমরকে বাথরুম থেকে গোসল করিয়ে বের হন। ওমরের কাপড়-চোপড় ড্রেসিং রুমের ভেতরে থাকায় ওমর ও তার মা ডলি ড্রেসিং রুমের দরজায় নক করেন। দরজা না খোলায় ওমর বাইরে থেকে বাবা বাবা বলে ডাকতে থাকে। ওমর ও ডলি ডাকার পরও দরজা না খোলার বিষয়টি সামিরাকে জানালে সামিরা ড্রেসিং রুমের চাবি এনে দরজা খোলেন। তখন ওমর, ডলি, মনোয়ারা, আবুল দরজার সামনে উপস্থিত ছিলেন।

স্লাইড শোতে আরও দেখানো হয়, ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে সালমান শাহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। সামিরা চিৎকার দিয়ে সালমানকে নিচ থেকে উঁচু করে ধরেন। এ সময় আবুল ও মনোয়ারা সহায়তা করেন। ডলি রান্না ঘর থেকে বটি এনে এলুমিনিয়ামের মই বেয়ে উপরে উঠে ফাঁসের রশি কেটে দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সালমান শাহকে ধরাধরি করে পাশের বেডরুমের মেঝেতে শোয়ায়। সামিরা মাথায় পানি দেন, ডলি ও মনোয়ারা তেল গরম করে সালমান শাহর বুকে, হাতে পায়ে মালিশ করেন। খবর পেয়ে সালমান শাহর ফ্ল্যাটে চলে আসেন দারোয়ান দেলোয়ার। আবুল ও দেলোয়ার সেবা-যত্ন করেন।

পিবিআই আরও দেখায়, সালমান শাহর বাবা, মা ভাইসহ অন্যরা সালমান শাহকে নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশে রওনা হন। সালমান শাহর বাবা, মা, ভাই ও চিত্রপরিচালক বাদল খন্দকারসহ অন্যরা তাকে নিয়ে হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে পৌঁছান। পরে সালমান শাহের বাবা, মা, ভাই ও চিত্রপরিচালক বাদল খন্দকারসহ অন্যরা তাকে নিয়ে হলি ফ্যামেলি হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। পরবর্তীতে কর্তব্যরত ডাক্তার সালমান শাহকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহকে ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের নিজ বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

পাঠকের মতামত: