সময়মতো রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখছে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র চীন। সেজন্য এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে কাজ করছে দেশটি। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে এ কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি আঞ্চলিক ইস্যু। আর তাই রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যস্থতা করছে চীন। চীনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। সেজন্য চীন এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে। কারণ দেশটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দুই দেশেরই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
বিশ্বের অনেক দেশই রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন চায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। লি জিমিং বলেন, কোনো কোনো পক্ষ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন চায় না। এখানে অনেক পক্ষ জড়িয়ে গেছে। তারা গঠনমূলকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে নয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেস উপলক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
লি জিমিং বলেন, চীন এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে। চীন এ বিষয়ে সবাইকে জানিয়ে কাজ করার পক্ষে নয়। চীন নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাইব, রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় তাদের নিজ ভূমে ফিরে যায়। রাষ্ট্রদূত বলেন, সমস্যার সমাধান দ্বিপক্ষীয়ভাবে হওয়া উচিত। যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু হোক, এটিই চীনের চাওয়া।
তিনি আরও বলেন, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী চীন। বাংলাদেশ সরকার যদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় তবে দেশটি সব ধরনের সহায়তা দেবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি একটি প্রকল্প যেটি চীন অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এটি বাস্তবায়নে হয়ত চীন বাধা নয়। যদি বাংলাদেশ সরকার সত্যিকারভাবে এটি করতে চায়, তবে চীন এটি বাস্তবায়ন করবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের ওপর কিছু বহিঃচাপ আছে। আমি সঠিকভাবে জানি না কোথা থেকে চাপ আছে এবং কেন।
বাংলাদেশ ভাটির দেশ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি অনুযায়ী সীমান্তের কাছে কোনো ধরনের বাঁধ নির্মাণ করা হবে না এবং বিপরীত স্রোতের কারণে উজানের দেশের জন্য এটি ক্ষতিকর নয়। এই প্রকল্প উজানের দেশের জন্য কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, আমাকে কয়েকজন বলেছে এই প্রকল্পের বিষয়ে যেন আমি সাবধানে থাকি। কারণ এর স্পর্শকাতরতা আছে। বিশেষ করে ভূ-রাজনৈতিক। অর্থ বা প্রযুক্তি নয়, বরং বাংলাদেশের সরকারের দৃঢ় সংকল্প এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় জিনিস বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিস্তা নদীর উৎসে বাঁধ দিয়ে পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করছে চীন, এমন মিডিয়া রিপোর্টের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এর উৎস সিকিমে (ভারতের একটি রাজ্য), চীনে নয়। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট রিপোর্ট। রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্য কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না চীন।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমার মত হচ্ছে উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা দরকার। আমরা আশা করি এদেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে যাতে আর্থ-সামাজিক উন্নতি অব্যাহত থাকে।
পাঠকের মতামত: