জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া::
বাঁশখালীর সাধনপুরের প্রদীপ রুদ্র (৩৫)। জীবিকার তাগিদে মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাস করেন কক্সবাজার শহরের ঘোনার পাড়ায়। পেশা তার তরিতরকারি বেচাকেনা। হঠাৎ শুনেন বাঁশখালীতে অসুস্থ নিকটাত্মীয়। তাই পরিবার নিয়ে কক্সবাজার থেকে ছুটে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসে করে যাত্রা পথেই তার সকল পরিকল্পনা ও স্বপ্ন চুরমার। চকরিয়ায় মাইক্রোটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়ক লাগুয়া পুকুরে পড়ে যায়।
গাড়িটি উল্টে পড়ার সময় কোলে থাকা সাত বছর বয়সী শিশু কন্যা শ্যামলীকে নিয়ে প্রদীপ আহতাবস্থায় গাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। তাই ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তারা। কিন্তু এ বাঁচাকেও মৃত্যুর সামিল মনে করছেন প্রায় বাকরুদ্ধ প্রদীপ। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি। বাবার কান্না দেখে মেয়ে শ্যামলীও কাঁদছিলো।
কাঁদতে কাঁদতেই প্রদীপ বলছিলেন, ‘কেন বেঁচে গেলাম!, যেখানে আমার মা, স্ত্রী ও সন্তানকে ফিরে পাব না আর, তাদের ছাড়া কি করে থাকবো আমি?, শ্যামলীকে সান্ত্বনা দিবো কি বলে?’
মাইক্রো দুর্ঘটনায় নিহত ৭ জনের মধ্যে রয়েছেন প্রদীপের মা রানী রুদ্র (৬০), স্ত্রী পূর্ণিমা রুদ্র (৩০) ও দুই বছরের শিশু সন্তান সার্থক রুদ্র। নিহত মা-ভাই ও দিদিমা (পিতামহী) আর ইহজগতে নেই তা প্রথমে বুঝতেই পারেনি অবুঝ শ্যামলী। শুধু বাবার কান্না দেখেই কাঁদছিল। চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাবার সাথে এসেই প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর নিথর মরদেহ দেখেই বুঝতে পারে তার ছোট ভাই, মা ও দিদিমা আর কোন দিন তার সাথে কথা বলবে না।
এ সময় বারবার আহত বাবাকে জড়িয়ে ধরছিল শ্যামলী। বাবা প্রদীপ মেয়েকে শান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে শুধুই কাঁদছিলেন। এ দৃশ্য দেখে হাসপাতালে জড়ো হওয়া বিভিন্ন বয়সী মানুষও অশ্রুসজল হয়ে পড়ে। ফোনে খবর শুনে বাঁশখালী সাধনপুর ও কক্সবাজার সদরের ঘোনারপাড়ায় শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেও আত্বীয়রা ছুটে আসে চকরিয়া হাসপাতালে৷ পূর্বকোণ
পাঠকের মতামত: