কক্সবাজার, রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমারে ‘সেফ জোন’ চায় রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক::
আমাদের জরুরিভাবে একটি নিরাপদ অঞ্চল এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রয়োজন, সাহায্যের উপর অবিরাম নির্ভর হতে চাই না৷ রোহিঙ্গা সংকট কেবল খাদ্যের বিষয় নয়, এটি ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা এবং মর্যাদার বিষয়। নিরাপত্তা এবং সম্মানের সাথে আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। মানবিক সহায়তা একটি প্রয়োজনীয়তা, কিন্তু সমাধান নয়। এই দুর্ভোগের চক্র বন্ধ করার একমাত্র উপায় হল জাতিসংঘের তত্বাবধানে একটি ন্যায্য, স্থায়ী সমাধান চায়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে রোহিঙ্গা নেতারা এ দাবি তুলে ধরেন।
শুক্রবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ৫, ১৮ ও ২০ নম্বর ক্যাম্পে পরিদর্শনের সময় রোহিঙ্গা নেতারা আরও বলেন, গত ৮ বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তার কোনোটি বাস্তবায়ন হয়নি। এটি শেষ আশা। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিজ দেশে ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠা হলে তারা সেখানে ফিরে যাবেন এবং নিরাপদে থাকবেন। তারা মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চেষ্টা চালালে ‘সেফ জোন’ তৈরি কিংবা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হবে।
উখিয়ার ১৮ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আজম শাহ জানান, আমরা শরনার্থী হয়ে থাকতে চায় না৷ আমরা চায় নিজ দেশে ফিরে যেতে৷ আমাদের দাবি একটি যদি একটা সেফ জোন করে দেয়, আমরা এই মুহুর্তে ফিরে যেতে প্রস্তুত আছি। পরবাসী জীবন আর নয়৷
বাংলাদেশের চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে লাখো রোহিঙ্গা নাগরিকের সঙ্গে ইফতার করেন। রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সবাই রাখাইনে ফেরার আকুতি জানান। রাখাইনে ফেরার আগপর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ আর কাজের সুযোগের বিষয়গুলো জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তুলেছেন রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী ও নেতারা৷
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ধর্মী নেতা শিক্ষার্থী ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমতটি হচ্ছে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে শান্তি পুনপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করে কোন ধরনের বৈষম্যের শিকার তারা যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি খাদ্য সংকটের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে দাতা সংস্থাদের সাথে বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের দুঃখ দেখে সমাধান করতে জাতিসংঘ মহাসচিব এসেছেন। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরাতে সারা দুনিয়ার সঙ্গে প্রয়োজনে লড়াই করতে হবে। আমরা সবাই চাই, প্রতি ঈদের নামাজ শেষে দাদা-দাদী নানা-নানির কবর জিয়ারত করতে চাই৷ কিন্তু এখন পারছেন না৷ তাই আগামী ঈদ নিজ দেশে করার আশা করছি৷ রোহিঙ্গাদের কথা শোনার জন্য মহাসচিব ক্যাম্পে এসেছেন৷ আপনাদের কথা শুনেছেন৷ মিয়ানমারে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে৷ তিনি আজ এখানে উপস্থিত থাকার কারণে বুঝতে পেরেছেন৷ তিনি আপনাদের জন্য ক্যাম্পে এসেছেন৷

পাঠকের মতামত: