কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভোল পাল্টেও পালাতে পারলেন না সালাউদ্দিন, ‘ইয়াবা সম্রাট’ বদির অন্য সহযোগীরা কোথায়?

আজিম নিহাদ, কক্সবাজার::

বাংলাদেশে ভয়ংকর মাদক ইয়াবার পৃষ্ঠপোষক বলা হয় আওয়ামী লীগের সাবেক বিতর্কিত সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে। হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০ আগস্ট রাতে চট্টগ্রামের একটি বাসা থেকে বদি আটক হন র‍্যাবের হাতে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারের বন্দী তিনি।

কক্সবাজার-৪ সংসদীয় আসনের দুই উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফ ছিল বদির অঘোষিত অপরাধ রাজ্য, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নিজের স্ত্রীকে দিয়ে দুইবার ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে পরপর চার মেয়াদে আঁকড়ে ছিলেন সংসদ সদস্যের চেয়ার।

ক্ষমতা আর পূর্বপুরুষের দেশ পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার হওয়ায় মাদকসহ আন্তর্জাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেটের গডফাদার হিসেবে দুই হাতে বদি কামিয়েছেন বিপুল অবৈধ অর্থ-সম্পদ।

নিজের সাম্রাজ্যে বদির অপরাধকাণ্ডে যুক্ত ছিল বিশ্বস্ত অনেক সহযোগী, নিজ উপজেলা টেকনাফ হলেও এই সহযোগীদের মধ্যে প্রতাপশালী অধিকাংশই স্ত্রীর পৈতৃক নিবাস স্থল সীমান্তে চোরাচালানের রুট সংলগ্ন উখিয়ার বাসিন্দা।

ওমরাযাত্রী হয়ে সৌদিআরব পালানোর সময় গত সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সিলেট বিমানবন্দরে র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েন তাদেরই একজন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

বদির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে থেকে পাল্টাতে থাকে একসময়ের নোহা গাড়িচালক সালাউদ্দিনের ভাগ্য। টানা তিন মেয়াদে রাজাপালং ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিন বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্প্রতি পেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব।

ইয়াবা ব্যবসায় সালাউদ্দিনের সম্পৃক্ততা ছিল এলাকার লোকজনের কাছে ওপেন সিক্রেট, অবৈধ অর্থ লেনদেন তদারকি করতেন বলে র‍্যাব তাকে বদির ক্যাশিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছে আটকের পর দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

এ ছাড়াও দখলদার হিসেবে ছিল সালাউদ্দিনের কুখ্যাতি। বন্ধু যুবলীগ নেতা তৌহিদের সঙ্গে মিলে স্থানীয় নুরুল আলম সওদাগরের জায়গা হাতিয়ে নিয়ে গড়েছেন মার্কেট।

এক সময়ের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান তৌহিদও বদির ছায়াতলে থেকে বনেছেন বিত্তশালী, দামী গাড়ি আর বাড়িসহ আছে তার প্রকাশ্য এবং গোপন সম্পদের পাহাড়।

একটি সামান্য স্বাক্ষর থেকে শুরু করে সাধারণদের নিয়ে বদিকেন্দ্রিক সব তদারকি উখিয়ায় হতো তৌহিদের ইশারায়, স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ছিল তার নখদর্পণে।

বদির স্ত্রী শাহিনের চাচাতো ভাই হওয়ার সুবাদে আনোয়ার সিদ্দিক মামুন চৌধুরী হয়ে উঠেন উখিয়ার দাপটে পরিবহন শ্রমিক নেতা, ক্ষমতা দেখিয়ে সমিতির নামে লোপাট করেছেন কোটি টাকা।

আলি হোসেন নামে স্থানীয় এক সিএনজি চালকের ভাষ্য, ‘লাইন ও সমিতি পরিচালনাসহ প্রশাসন ম্যানেজের কথা বলে আমাদের রক্তঘামের অজস্র টাকায় পকেট ভরেছে মামুন। এমনকি বিচার শালিসের নামে চালক ভাইদের উপর তিনি চালাতেন পাশবিক নির্যাতন।’

পার্শ্ববর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ জগতেও আছে মামুনের প্রভাব, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আরসার অনেক নেতার সঙ্গে তার সখ্যতার প্রকাশ্য প্রমাণ মেলে সরকার পতনের পরদিন।

জাহেদ নামে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যানুযায়ী, আরসার ভাড়াটে শতাধিক সন্ত্রাসী এনে উখিয়া স্টেশনে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরসহ সহিংসতায় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মামুন এবং ছুঁড়েন কয়েক রাউন্ড গুলিও।

রড সিমেন্টের আবছার নামে পরিচিত নুরুল আবছারের কাছে জিম্মি ছিল ক্যাম্পকেন্দ্রিক সাপ্লাই চেইন ও ঠিকাদারি ব্যবসা। বদির আপনজন হয়ে তিনিও দেখিয়েছেন নিজের প্রতাপ।

উখিয়া সদর স্টেশনের শেষপ্রান্তে খাল দখল করে আবছার বানিয়েছেন দোকান ঘর ও বিলাসবহুল বিশ্রামাগার, যেটি ছিল বদির নারী নিয়ে জলসার ঠিকানা।

বদির আশীর্বাদে ইয়াবা কারবার করে গত কয়েক বছরে উখিয়ার মাফিয়া বনে গেছেন বাদশা নামে আরেকজন, যিনি উখিয়ায় টমটম বাদশা নামেই পরিচিত।
এক সময়ের টমটম অটোরিকশার চালক এখন একাধিক বহুতল ভবন ছাড়াও অঢেল সম্পদের মালিক ‘টমটম বাদশা’।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসাইন জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পূর্ব-পরবর্তী সময়ে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া উখিয়া থানায় তিনটি মামলার আসামি সালাউদ্দিন, তৌহিদ, মামুন ও আবছার।

সালাউদ্দিন আটক হলেও বাকিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রত্যেকের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ।

৬ তারিখের পর থেকে এলাকায় দেখা না যাওয়া তৌহিদ ও আবছার সৌদি আরব পালিয়ে গেছেন বলে লোকমুখে রটেছে অসমর্থিত খবর। তবে জানা যায়নি কোথায় আছেন মামুন? সূত্র চ্যানেল২৪

পাঠকের মতামত: