পৃথক হামলায় পাঁচ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির পর ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের একাংশে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়েছে। রোববার কাশ্মিরের রাজৌরি জেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় বেসামরিক প্রাণহানির পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযান ঘিরে এই উত্তেজনা চলছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, রোববার সন্ধ্যার দিকে রাজৌরি জেলার তিনটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এতে অন্তত চারজন নিহত ও আরও ৯ জন আহত হন। সোমবার সকালের দিকে একই স্থানের কাছে ফের বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণে এক শিশু নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন।
তবে রাজৌরির এই বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। রোববারের ওই হামলার প্রতিবাদে রাজৌরিতে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট শুরু করেছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। নিরাপত্তা ত্রুটির জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করেছেন তারা।
ওই অঞ্চলের প্রশাসনিক প্রধান মনোজ সিনহা ‘রাজৌরিতে কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা এবং নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমি জনগণকে আশ্বস্ত করছি, এই ঘৃণ্য হামলার পেছনে যারা জড়িত, তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’
উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সাল থেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশি ভারত-পাকিস্তানের বিবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মির। বিবাদপূর্ণ কাশ্মিরের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু উভয় দেশই দুই কাশ্মিরকে নিজেদের বলে দাবি করে। কাশ্মির নামে ছোট একটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে চীনেরও।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর এ দুই প্রতিবেশি দেশ ১৯৪৮, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে তিনবার পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এরমধ্যে কেবল কাশ্মির ঘিরেই দুই দেশের মাঝে যুদ্ধ হয়েছে দু’বার।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো স্বাধীনতা অথবা প্রতিবেশি পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার দাবিতে সেখানে দশকের পর দশক ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার মতে, ১৯৮৯ সালে নয়াদিল্লির শাসনের বিরোধিতায় শুরু হওয়া সশস্ত্র বিদ্রোহে এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
তবে হিমালয়ের কোল ঘেঁষে থাকা এই অঞ্চলটিতে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয় ২০১৯ সালে। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার কাশ্মিরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেওয়ার পর নতুন করে সংঘাত শুরু হয়। মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানকেও ক্ষুব্ধ করে তোলে।
কাশ্মিরে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে সেখানে পাকিস্তান বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ করেছে ভারত। যদিও নয়াদিল্লির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ।
পাঠকের মতামত: