‘সব ভালো তার, শেষ ভালো যার।’ প্রবাদটি অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকে’টের ক্ষেত্রে তো আরো গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিপক্ষের শত সাফল্য মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ম্লান হয়ে যেতে পারে রান তাড়া করা কোনো একজন ব্যাটসম্যানের ফিনিশিং টাচের কারণেই।
টান টান উ’ত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তেও ফিনিশাররা নিজেদের স্নায়ুচা’প ধরে রেখে দলকে নিয়ে গিয়েছেন জয়ের তীরে। ইতিহাস তাই সবসময়ই তাঁদের নাম যত্ন করে আগলে রেখেছে।
পরিসংখ্যান, ইন্টারনেট ও বড় বড় স্পোর্টসপোর্টাল ঘেঁটে স্পোর্টসজোন তার পাঠকদের জন্য আজ খুঁজে নিয়ে এসেছে সর্বকালের সেরা ১০জন ফিনিশারকে। সংক্ষি’প্ত বিবরণীসহ সেসব গ্রেট ব্যাটসম্যানের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো –
১০ | জাভেদ মিঁয়াদাদ (পাকিস্তান)
শুরুটা না হয় উল্টোদিক থেকেই করি। তাহলে যতোই উপরে যাওয়া হবে, ততোই উ’ত্তেজনা বাড়বে। তালিকার দশম অবস্থানে আছেন পাকিস্তানি সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ মিঁয়াদাদ। তিনি যখন পাকিস্তানের হয়ে খেলতেন, তখন তার দল মোট ৪৭ বার সফলভাবে রান তাড়া করে জয় লাভ করেছিল। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার বড় অবদান ছিল৷
ক্যারিয়ারে তিনি মোট ১৪০৩ রান করেন। তার গড় রান ছিল ৬১.০০! ফিফটি করেছিলেন ১১ বার, সেঞ্চুরি করেছিলেন ১ বার। আর সেই সেঞ্চুরিটিই হয়তো তার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। কারণ ১৯৮৬ সালে তিনি যেই ম্যাচে সেঞ্চুরিটি করেন, সেটি ছিল এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ তাও আবার ভারতের বিপক্ষে ৷ চরম উ’ত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে চেতন শর্মাকে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয়ের প্রান্তে নিয়ে যান তিনি।
৯ | অজয় জদেজা (ভারত)
নব্বইয়ের দশকে ভারতের অন্যতম সেরা ফিনিশার ছিলেন অজয় জদেজা। তার ইনিংসের ওপর ভর করে ভারত যেসব সাফল্য পেয়েছিল, তারমধ্যে একটি হচ্ছে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়। তার আমলে ভারত ৩৮বার সফলভাবে রান তাড়া করে জয় লাভ করেছিল৷ ৪৭.২৮ গড়ে তিনি মোট ৬৬২ রান করেছিলেন। অবশ্য তিনি কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেননি।
৮ | জস বাটলার (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ড এখনো জস বাটলারের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে কোনো স্থায়ী সমাধান বের করতে পারেনি৷ কারণ সব্যসাচী বাটলারকে আপনি যে অবস্থানেই খেলান না কেন, তিনি সফলভাবেই ব্যাটিং করে আসবেন। একারণে টি-টোয়েন্টিতে তাকে টপ অর্ডারে খেলানো হচ্ছে আর ওয়ানডেতে তিনি খেলছেন মিডল অর্ডারে৷ ফলে টি-টোয়েন্টিতে তাঁকে ফিনিশার রূপে না দেখা গেলেও ওয়ানডেতে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন ফিনিশার রূপেই।
তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি ইংল্যান্ডকে ৪২টি ওয়ানডেতে পরে ব্যাট করে জিততে দেখেছেন যার বেশিরভাগ জয়েই ছিল তার বড় অবদান। চারটি হাফসেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরি পাওয়া বাটলার এসময় করেছেন ৬৬৬ রান। আর তার গড় রান ৬০.৫৪!
৭ | আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এই হার্ডহিটারকে আমরা তার বিধ্বং’সী ব্যাটিংয়ের জন্য চিনি। গত বিপিএলের জন্য রাজশাহী রয়েলস ভক্তরা তাকে আরো ভালোভাবেই মনে রাখবেন। দ্বিতীয় কোয়ালিফাই ম্যাচে তার ২২ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংসের ওপর ভর করেই রাজশাহী ফাইনালে পৌঁছে যায় এবং বঙ্গবন্ধু বিপিএলের শিরোপা অর্জন করে। এরকম আরো অনেক ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল৷
৬ | মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
বাংলাদেশি এই তারকা পরিচিতি পেয়েছেন সাইলেন্ট কিলার নামে। এই তালিকাটি তার সৌন্দর্য হারাতো যদি কিনা তাঁকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা হতো। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তাঁর ডাবল সেঞ্চুরি, ২০১৭ সাকিবের সঙ্গে ২৩২ রানের জুটি, নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশাল ছক্কা মে’রে জয় তুলে আনা – এরকম অসংখ্য মুহূর্ত দেশকে উপহার দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
৫ | মাইক হাসি (অস্ট্রেলিয়া)
এই মানুষটিকে নিয়ে বিস্মিত চোখে হার্শা ভোগলে একবার বলেছিলেন, ‘এমনকিছু কি আছে যা এই মানুষটি করতে পারেন না?’ মাইক হাসি অস্ট্রেলিয়ার সফলতম ফিনিশারদের একজন। সাদা অস্ট্রেলিয়ার ৫০টি সফল রান তাড়া করা ম্যাচের অংশীদার তিনি। এসময় ৭১.১০ গড়ে তিনি মোট ৭১১ রান করেছেন।
৪ | যুবরাজ সিং (ভারত)
সেই ২০০০ সাল থেকে ভারতকে ৯০টি ম্যাচে পরে ব্যাটিং করার সময় জয় এনে দিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। এসময় ৫২.৬৫ গড়ে তিনি মোট ২৫৮০ রান করেন। যেখানে ছিল ২১টি ফিফটি ও ১টি সেঞ্চুরি।
৩ | লেন্স ক্লুসনার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
সাবেক প্রোটিয়ান এই ব্যাটসম্যানকে আধুনিক হার্ডহিটিংয়ের প্রবর্তক বলে মনে করেন অনেকে। রান তাড়া করার সময় লোয়ার মিডলঅর্ডারে নেমে ক্লুসনার ৫৩ টি ইনিংসে ৯৩.২৪ গড়ে ১১০৪ রান সংগ্রহ করেন।
১ | মাইকেল বেভন (অস্ট্রেলিয়া)
মাইক হাসি এবং ধোনির পর এই তালিকার শীর্ষ অবস্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান মাইকেল বেভন। যিনি কিনা একজন সত্যিকারের ফিনিশার ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে এবং বর্তমান শতাব্দীর প্রথমদিকে তিনি দারুণভাবে ফিনিশারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালের ১লা জানুয়ারি তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৮ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে আনেন।
এরপর আরেক ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেভন ম্যাজিকে (৯৫ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস) সেদিন বড় বিপদ থেকে রক্ষা পায় অস্ট্রেলিয়া। ছয় বছর পর একইভাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হয়ে ২৪৬ রান তাড়া করে তিনি ২ উইকে’টের জয় এনে দেন যখন কিনা তাদের ৮২ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল।
৭২টি সফল রানচেজের সময় এই অজি তারকা ৮৪.৬৩ গড়ে ১৬০৪ রান করেন। যেখানে ১১টি ফিফটির পাশে ছিল ৩টি সেঞ্চুরি।
২ | মাহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)
মাইকেল বেভন নামে কোনো ব্যক্তি যদি পৃথিবীতে না থাকতো, তবে হয়তো ধোনিই এই তালিকার শীর্ষে থাকতেন। তিনি ক্যারিয়ারে ১১২টি সফল রান তাড়ায় বড় অবদান রেখেছেন। ৯১.২৮ গড়ে এসময় তিনি করেন ২৫৫৬ রান।
পাঠকের মতামত: