বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া না আসতে স্বজাতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। তারা বলেছেন, এক সময় উন্নত জীবনের আশায় তারা ঝুঁকি নিয়েই অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাদের ভালো থাকার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। কারণ মালয়েশিয়ায় গিয়ে তারা কোনো কাজ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া অবৈধ অভিবাসী আখ্যায়িত করে শিকার হতে হয় পুলিশি হয়রানির। তাই বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোয় যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই হোক না কেন, সেখানেই অবস্থান করতে তাদের ভাই, বন্ধু ও স্বজনদের আহ্বান জানান রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে তাদের অনেকে মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করছে বলেও জানায় তারা। মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে অবস্থানরত কিছু রোহিঙ্গা রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে এ আহ্বান জানায়।
সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায়। প্রাণ বাঁচাতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে এসব রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে। তবে উন্নত জীবনের আশায় দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে মাঝে মাঝেই রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোয় রওনা হয়। আবার অনেকে ভুয়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেও বিদেশ যায়। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে যা বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে ৩০ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইমরান নামে এক রোহিঙ্গা জানান, ২০১৭ সালের শেষদিকে জাল বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে তিনি প্রথমে থাইল্যান্ড পালিয়ে আসেন। এর পর সেখান থেকে মালয়েশিয়া যান। এর জন্য তিনি পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন ৪ হাজার ৭২০ ডলার। কিন্তু মালয়েশিয়ায় পৌঁছেই তার মোহভঙ্গ হয়। ইমরান বলেন, ‘ভেবেছিলাম মালয়েশিয়ায় এসে ভালো জীবন, কাজ করার এবং চলাফেরায় স্বাধীনতা পাব। আমাদের পুলিশ হয়রান করবে না। কিন্তু তা ঘটছে না।’
ইমরান বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কাউন্সেলরের অফিসে। এ থেকে তিনি মাসে আয় করেন মাত্র ৬০০ ডলার। তিনি জানান, তার মা বর্তমানে সৌদি আরবে আছেন। মায়ের আশঙ্কা, তিনি আর হয়তো কখনই ছেলেকে দেখতে পাবেন না। ইমরানের ছোট দুই বোন আছে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে। প্রতি মাসে তাদের টাকা পাঠান তিনি। ফলে নিজের খাবার, বাসা ভাড়ার জন্য কিছুই জমা রাখতে পারেন না তিনি। ইমরান বলেন, বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছে তাদের অন্তত পরিবার, বন্ধুবান্ধব আছে চারপাশে। সেখানে সবার কথাবার্তা, ভাষা সবাই বুঝতে পারে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় আমাদের ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট। আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
ইমরানের মতোই একই কথা বলেন পেনাংয়ে অবস্থানরত অন্য রোহিঙ্গারাও। তারা জানান, সেখানে রোহিঙ্গাদের কেউ ভালো নেই। তাই যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ভাবছেন, তারা যেন সেখানে না আসেন।
দেশটিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
পাঠকের মতামত: