কক্সবাজার, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

বন্যার অবনতি: পানিবন্দি দেড় লক্ষাধিক মানুষ

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর ফলে জেলার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, সদর, নাগেশ্বরী উপজেলাসহ ৯ উপজেলার ৩৫ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি জীবন যাপন করছে।

গত গত ৫ দিন ধরে পানিবন্দি এসব মানুষের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়া গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষজন।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, এই ইউনিয়নের পুরোটাই বন্যা কবলিত। প্রায় ১৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। এসব মানুষের হাতে কোন কাজ না থাকায় জরুরিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন চাল বা শুকনো খাবার বরাদ্দ পাননি তিনি।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের বদলীপাড়া এলাকার ছকিনা বেওয়া, সুরুজ্জামান, শাহাজাহান বলেন, গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। হাতে কাজ নাই, ঘরে খাবারও নাই। এ অবস্থা পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন পাড় করছি।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ময়নুদ্দিন ভোলা জানান, তার ওয়ার্ডের পানিবন্দি মানুষেরা অবর্ণনীয় কষ্টে থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পায়নি। এ কারণে কোন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি বলে জানান চেযারম্যান সিদ্দিক মন্ডল।

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দই খাওয়ার চরের কালু মিয়া, সিরাজুল হক, রমজান আলী বলেন, ঘরের ভেতর পানি উঠেছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে কষ্টে আছি। নৌকা ছাড়া চলার উপায় নেই। পানি আরো বাড়লে বাড়িতে থাকার উপায় থাকবে না। আশেপাশে কোন শুকনো জায়গাও নেই।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম বলেন, বন্যা কবলিত এসব মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ৩৬ লাখ ৬৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, জেলায় ৫ হাজার ৬৫৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, আউশ, শাক সবজি, পাটসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে।

রংপুর বিভাগীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, আগামী মাসের ৪/৫ তারিখ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ধরলা ও তিস্তার পানিও বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ সময় নদ-নদীর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: