প্রাথমিক শিক্ষকদের বর্জনের হুমকির কারণে সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে রয়েছে সরকার। যদি প্রাথমিকের শিক্ষকরা পরীক্ষা না নেয় তাহলে বিকল্প পন্থায় সমাপনী আয়োজনে চিন্তা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের যে অংশটি আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে না তাদের মাধ্যমেই সমাপনী আয়োজন করা হতে পারে।
এদের সহযোগিতার জন্য যুক্ত হবেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষকরা। এছাড়াও পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন করবেন মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা।
এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) পরীক্ষা গ্রহণের জন্য এটিই সরকারের কাছে থাকা একমাত্র বিকল্প পন্থা।
তবে প্রাথমিকের আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন তাদের দাবি মেনে নিলে তারা নিজেরাই সমাপনী পরীক্ষা আয়োজন করবে। সে জন্য মন্ত্রণালয়কে ‘শিক্ষক ভাড়া’ করতে হবে না।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ নভেম্বর সারাদেশে সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে।
এদিকে সমাপনী পরীক্ষা আয়োজনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের পরীক্ষার হলে দায়িত্ব দেয়ার জন্য তালিকাও তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়।
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সমাপনী পরীক্ষায় কারা কারা দায়িত্ব পালন করবেন সে তালিকা এরইমধ্যে করা হয়ে গেছে। এখন চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হবে। আন্দোলনরত শিক্ষকদের বাদ দিয়েই সমাপনী আয়োজন করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন জাতীয় স্কেলের দশম এবং সহকারী শিক্ষকদের একাদশ গ্রেডের দাবিতে শিক্ষক আন্দোলন চলছে। দাবি আদায়ে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় সীমা দিয়ে রেখেছেন তারা। পাশাপাশি ঘোষণা দিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণের ব্যবস্থা না হলে সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করবেন তারা।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এর নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষকদের ওই দাবি আপাতত মেনে না নেয়ার ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ডিপিইর পরিচালক (প্রশাসন) মো. সাবের হোসেন স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগাদমী ১৭ নভেম্বর সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৭ হাজার ৪৫৮টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এরমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৯৩১টি ও ৩ হাজার ৫২৭টি মাদরাসায় কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ডিপিই থেকে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এরইমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কেন্দ্র নির্বাচন কাজ শেষ হলেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে যেসব পরীক্ষাকেন্দ্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেন্দ্র সচিব অথবা ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, সেসব পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রয়োজনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় অথবা মাদরাসার প্রধান শিক্ষক বা সুপারিনটেনডেন্ট এবং সহকারী শিক্ষকদের দায়িত্ব প্রদান করে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্নের বিকল্প প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
ডিপিইর এ নির্দেশনার পর এরইমধ্যে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা গ্রহণের বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতা বদরুল আলম বলেন, আমরা আমাদের দাবি থেকে এখনো সরে যাওয়ার চিন্তা করছি না। দাবি মেনে না নিলে ১৩ তারিখ থেকে আবার আন্দোলন শুরু করব। মন্ত্রণালয় যদি আমাদের দাবি না মেনে মাধ্যমিক শিক্ষকদের নিয়ে সমাপনী আয়োজন করেন তাহলে এটি একটি অন্যায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষদকদের আন্দোলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক। মন্ত্রণালয়কে শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সমাপনী আয়োজন করতে তারা অনুরোধ করেছেন।
সেগুনবাগিচায় খোরশেদ আলম নামের এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরা যে দাবি জানিয়েছেন তা যৌক্তিক। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে কিন্তু শিক্ষকদের বেতন বাড়েনি। সংসারে অভাব রেখে ভালোভাবে শিক্ষা দেয়া যায় না। আমি মনে করি শিক্ষকদের এ দাবি মেনে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সমাপনী আয়োজন করা উচিত। শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য এটি মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত হবে।
সুলতানা জাহান নামের আরেক অভিভাবক বলেন, সমাপনী হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। এ জন্য বাচ্চারা ঠিক মতো পড়াশোনাও করেনি। স্কুলে ক্লাস হয়েছে কম। এই সমস্যার সমাধান করে সমাপনী নেয়া উচিত। এটি করা না হলে বিষয়টি আরো জটিল আকার ধারণ করবে।
এ অভিভাবকের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদও একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, আমাদের একটি দাবিও অযৌক্তিক নয়। এখন কর্তৃপক্ষ যদি পেশির জোরে বিষয়টি সমাধান করতে চায়, তাহলে হয়তো সেটি আরো জট পাকাবে। আগে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হোক, বিষয়টা সুষ্ঠু সমাধান হোক তারপর পরীক্ষা নেয়া হোক। এটি করা না হলে সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন দুই ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস এবং ১৭ অক্টোবর সারাদিন কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার চেষ্টা করেন তারা। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পাঠকের মতামত: