পর্যটনের শেষ মৌসুম ও রমজান মাসে কক্সবাজারে পর্যটকে শূন্যতা দেখা দেয়। তবে আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ জন্য হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো ধোয়া-মোছাসহ পর্যটক বরণে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঈদের পর থেকে সপ্তাহ দুয়েকের জন্য হোটেলের অগ্রিম বুকিং চলছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেলের কক্ষ ৫০ শতাংশের বেশি বুকিং হয়ে গেছে। অগ্রিম বুকিং ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে শতভাগ হোটেল বুকিং হয়ে যাবে। এতে রমজান মাসে পর্যটক শূন্যতার ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটক সমাগম হতে পারে। তাই, পর্যটকদের বরণ করতে সৈকত নগরীর ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ প্রস্তুত করা হয়েছে। এবারের ঈদের ছুটি দিয়েই কক্সবাজারে পর্যটন মৌসুম শেষ হচ্ছে।
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগমের আশা
কক্সবাজার সৈকতের কিটকট (বসার চেয়ার) ব্যবসায়ী ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘এ বছর ঈদে আশা করছি ব্যবসা ভালো হবে। অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এবারের ছুটিতে লাখো পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবে।’
সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘রমজানের পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা হয়নি। তাই দোকান বন্ধ রাখা রয়েছে। তবে ঈদের পরে ব্যবসার জন্য নতুন করে মালামাল ওঠানোসহ সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
তারকা মানের হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘পবিত্র রমজান মাসে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারেননি পর্যটকরা। এখন ঈদের পরে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক আসবে। এ জন্য আমাদের হোটেলে বেশিরভাগ রুম বুকিং হয়ে গেছে।’
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, ‘এখন গরমের সময়। এছাড়া পর্যটনের শেষ মৌসুম। এরপরও ঈদের পরের দুই সপ্তাহ লাখো পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু হোটেল-মোটেলের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। আবার কিছু কিছু হোটেলে আশানুরূপ হোটেল বুকিং হয়নি। সবমিলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হোটেল-মোটেলের কক্ষ বুকিং হয়েছে। এই অবস্থা চলমান থাকলে, ঈদের সময় পর্যন্ত শতভাগ হোটেল বুকিং হতে পারে।’
কক্সবাজার কলাতলী হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিম খান জানান, ‘এখন পর্যটনের শেষ মৌসুম। তার ওপর পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় গত মাস দুয়েক ধরে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। এতে কক্সবাজারে গড়ে ওঠা পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেলের মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। কিন্তু, আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ হোটেল-মোটেলের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। হোটেলগুলোতে বুকিং আরও বাড়তে পারে। তাই কক্সবাজারে আগত পর্যটকবরণে হোটেল মালিকরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘প্রতি বছরই রমজান মাসে পর্যটকশূন্য থাকার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের সাজসজ্জাসহ সব ধরনের মেরামতে কাজ হয়ে থাকে। সাজসজ্জার প্রস্তুতি কাজ প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে হোটেল- মোটেল ও গেস্ট হাউজে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। ঈদের আগের দিনগুলোতে বাকি কক্ষগুলোও বুকিং হতে পারে।’
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, ‘রমজানে উপস্থিতি কম হলেও ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সমাগম ঘটবে। তাই পর্যটকের সেবা নিশ্চিত করতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছে প্রশাসন। পর্যটকের কাছ থেকে হোটেল-মোটেলগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
পাঠকের মতামত: