কক্সবাজার, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

দৈনিক - ৩ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

নয় দিন ধরে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

মিয়ানমারের আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিফ দখলে নেওয়ার পর মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বাণিজ্য থাকলেও দেশটির ধারাবাহিক সংঘাতের প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিতে। আজ ৯ দিনে মিয়ানমার থেকে মাত্র একটি মাছের কার্গো ট্রলার এসেছে টেকনাফ এক স্থলবন্দরে।

গত শুক্রবার মাছ বহনকারী ট্রলার আসার পর থেকে এখনো কোনো পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার বা জাহাজ স্থলবন্দরে আসেনি।মিয়ানমারের পরিস্থিতি শান্ত না হলে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আরকান আর্মির সাথে রোহিঙ্গারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। রোহিঙ্গারা সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় রোহিঙ্গাদের কে জুলুম নির্যাতন করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এপারের রোহিঙ্গারা।

টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর জানান,৯ দিন ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।এর আগে আকিয়াব ও ইয়াঙ্গুন থেকে থেমে থেমে অল্প পরিসরে পণ্য আমদানি হলেও মংডু টাউন আরাকান আর্মির দখলে নেওয়ার পর থেকে একদম বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পড়েছেন   আমদানি-রপ্তানিকারকরা।

টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস সূত্র জানায়,গত জুন-নভেম্বর মাস পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৮ হাজার ৮শত মেট্রিক টন নানা ধরনের পণ্য (হিমায়িত মাছ, শুঁটকি,আচার,সুপারি, বিভিন্ন ধরনের কাঠ,পেঁয়াজ, সানাকা মাটি) এসেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছিল ৭৮ হাজার ৫২৭টন পণ্য। এর আগে ২০২২-২৩অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পণ্য এসেছিল ১ লাখ ৯৯হাজার ২২৫মেট্রিক টন।বাংলাদেশ থেকে জুন-নভেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩১০ কেজি।২০২৩-২৪অর্থবছর ১ হাজার ৪০৮ মেট্রিকটন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৫২৩মেট্রিক টন পণ্য।

স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোট টেকনাফ লিমিটেডের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন,স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ৯ দিন আগে মাছ নিয়ে একটি ট্রলার এসেছে। আর কোনো পণ্যবোঝাই কাগো ট্রলার বা জাহাজ আসেনি।

স্থলবন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান,স্বাভাবিক সময় বন্দরে ১৫-২০টি  নিয়মিত নানা ধরনের ট্রলার ও জাহাজ থাকতেন। ৩০-৩২টি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আছে। এখন এজেন্টের কোনো কাজ নেই বললেই চলে। আগে নানা ধরনের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জমজমাট থাকত স্থলবন্দর। তবে মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সবকিছু বদলে গেছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুকনা সুপারি, পেঁয়াজ, আদা, শুঁটকি, নারকেল, আচার প্রভৃতি পণ্য আমদানি হয়।আর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রপ্তানি হয় আলু, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, তৈরি পোশাক, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ও কোমল পানীয়।

টেকনাফ স্থলবন্দরে শুল্ক কর্মকর্তা বিএম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, গত আটদিনে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় দৈনিক ২-৩ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হারাচ্ছে সরকার।

পাঠকের মতামত: