কক্সবাজার, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর করোনায় ‘ভিন্ন পরিস্থিতির’ সম্মুখীন জার্মানবাসী

করোনাভাইরাস ঠেকাতে জার্মানি যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়নি দেশটির জনগণ। আর এর ফলে জীবনযাত্রাও বদলে গেছে রাতারাতি।

ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়ছে জার্মানে অফিস ধরার যেই ট্রামে সকাল বেলা বসার আসন পাওয়া যেতো না প্রায়ই, সেটি এখন যাতায়াত করছে হাতে গোণা কয়েকজনকে নিয়ে। তারা বসছেন একে অন্যের থেকে বেশ দুরত্ব বজায় রেখে।

এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের বেশিরভাগ কাজ করছেন বাসা থেকে। বন্ধ থিয়েটার, সিনেমা হল, পাব, বার, নাইট ক্লাব, জিম, খেলাধুলার আয়োজন থেকে শুরু করে বিনোদনের সব কিছু৷ মার্কেটে জরুরি প্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া খুলছে না বাকিগুলো। বেঁধে দেয়া হয়েছে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার সময়সীমাও। বিকেল বা সন্ধ্যার চেনা বন শহরটি দেখতে কেমন যেন ভূতুড়ে হয়ে উঠেছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বেটোফেনের ভাস্কর্যই শুধু একা দাঁড়িয়ে। এমন চেহারা আমার মতো প্রবাসী তো বটেই, জার্মানদের কাছেও নিশ্চয়ই অচেনা।

এরই মধ্যে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ ৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা জনগণকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে সরকার।

জাতির উদ্দেশে দেয়া বিরল ভাষণে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি এ দেশ৷ চীন বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সরকারের মতো জনগণের চলাচলের উপর বাধা আরোপের পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের নেই। কিন্তু এখন সেটি করতে হচ্ছে। এ নিয়ে যেন সরকারের মধ্যেও কিছুটা অস্বস্তি কাজ করছে। তাই বিনয়ের সঙ্গে বেঁধে দেয়া নিয়ম মেনে চলতে জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন ম্যার্কেল তার ভাষণে।

সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে জানিয়েছেন, মহামারির এই পরিস্থিতিতে দুই বছর পর্যন্ত ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে৷ সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত করা হচ্ছে সেনাবাহিনীকে।

এমন পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে অবশ্য জার্মানিতে একটি আইন রয়েছে। সেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিধি ২০০১-এর আওতায় বিভিন্ন জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মানুষ অবাধ চলাফেরাসহ যেসব মৌলিক অধিকার বরাবর ভোগ করেন এই আইনের অধীনে সেগুলো কিছুটা রহিত করা সম্ভব। এরইমধ্যে সেসব পদক্ষেপও নিতে শুরু করেছে সরকার। গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহভাজনকে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হচ্ছে।

জার্মানিতে এখন পর্যন্ত একমাত্র বাভারিয়া রাজ্যই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপক ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে নিজেদের অধীনে নিলো রাজ্য সরকার, যা সাধারণত স্থানীয় প্রশাসন বা শহর কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকে। বাভারিয়ার সব হাসপাতালও এখন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেখানকার প্রশাসন চাইলে অবসরপ্রাপ্ত ও সরকারের অধীনে না থাকা ডাক্তারদেরও দায়িত্ব পালনে তালিকাভুক্ত করতে পারবে।

তবে এখন পর্যন্ত জার্মানির কোনো রাজ্যে কার্ফিউ ঘোষণা করা হয়নি। সামনের দিনে সেই আশঙ্কা অবশ্য একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ফ্রাইবুর্গ ও লেভারকুজেনে দুই সপ্তাহের ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে।

জার্মানির আইন অনুযায়ী অভ্যন্তরীন বা বাইরের হুমকি মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায়। সেটি মহামারি পরিস্থিতিতেও কার্যকর হতে পারে। ১৯৬৮ সালে পাস হওয়া আইনটি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে আবারও নাৎসি একনায়কতন্ত্রের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেন কেউ কেউ। এবার যদি সেটি কার্যকর হয়, তাহলে এতদিন ধরে মুক্ত আর স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত জার্মানদের অপরিচিত এক রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মুখোমুখি হতে হবে। গত ৭০ বছরের ইতিহাসে যে ব্যবস্থা কখনো জারি হয়নি ফেডারেল রিপাবলিকটিতে।

পাঠকের মতামত: