দেশে দুর্নীতির মাত্রা অনেক ক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেড়েছে বলে স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল-২০২৩ পাসের আলোচনায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরাম ও জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেন।
দুর্নীতির বিষয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একটি বিষয়ে তারা (আলোচনায় অংশ নেওয়া সংসদ সদস্যরা) সবাই একমত, আমিও তাদের সঙ্গে একমত।
দেশের সর্বত্র, অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় আনুপাতিক হারে বেড়েছে।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ পাবলিক মানি ৩০-৪০ বছর আগে ব্যয় হত, তার তুলনায় ২-৩-৪ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে সুযোগ-সুবিধা, চুরির সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে বলে আমি বলব। এটা জাতীয় সমস্যা।
আইনকানুন পাস ও বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনমত তৈরি এবং জনগণের কাছে স্বচ্ছতা তুলে ধরে প্রচার করা হলে এর পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প আমার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাস হয়ে যায়। এগুলোর জন্য একসময় ক্রয়ে যেতে হয়। অতীতের যে সিপিটিইউ ছিল সেটা বর্তমান সময়ে ভলিউমের সঙ্গে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না।
তাদের জনবল, যন্ত্রপাতির অভাব, অনেক ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব। সেই সমস্যার সমাধানে বিলটা আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, কোনো টেন্ডারই আমি মন্ত্রী বা সিপিটিইউ ডিজি পাস করতে পারি না। কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই করে ফাইনাল হয়। এরপরও যদি সংশয় থাকে, সেই ভূতে ভয় না পেয়ে একটানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এর আগে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এখন টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়েছে। এক শ্রেণির আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ বর্তমান টেন্ডার ব্যবস্থাকে নিরাপদ মনে করে। এর আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এর ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে, পর্দা কেনা, বালিশ কেনা ইত্যাদি।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, আগে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ দুর্নীতি হত। আর এখন ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ কাজ হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ দুর্নীতি হয়।
শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আটকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, মেগা প্রকল্প উনার (পরিকল্পনামন্ত্রী) কাছ থেকে যায়। তখন তিনি যদি আটকাতে পারতেন তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ও আমাদের কাছে অনেক টাকা থাকত।
তিনি আরও বলেন, অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আসছে কিন্তু তা থেকে রিটার্ন আসছে না। এটা বোঝার মতো সক্ষমতা নেই এটা আমি বিশ্বাস করি না।
শামীম হায়দার বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ব্যাংক প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে। খোলাবাজারে ডলার কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে এটা এখানে বলব না, বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাদারিত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিলটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে জাতীয় সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিলুপ্ত হবে। বিপিপিএর ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তবে সরকার চাইলে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে ও কমাতে পারবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী হবেন এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। আর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কাউকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার।
এই কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে। তার কাজ সম্পাদনের জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে বিপিপিএ।
পাঠকের মতামত: