বলা হয়ে থাকে হাসিই না কি একটি মুখের সবচেয়ে বড় অলংকার। আর এ হাসিকে সুন্দর করে তোলে দুটি পাটি মেলানো ঝকঝকে সুন্দর দাঁত। কিন্তু সেই দাঁতের মাঝে যদি ফাঁকা থেকে যায় তবে তা সেই সৌন্দর্যকে অনেকটাই ম্লান করে দেয়। বর্তমান সময়ে ফাঁকা দাঁত বিশেষ করে সামনের দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা।
প্রথমেই দাঁত ফাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে একটু জানা যাক। সাধারণত জেনেটিক কারণে এটি বেশি হয়ে থাকে। দেখা যায় বাবা মায়ের এ সমস্যা থাকলে তা সন্তানদেরও দাঁত ফাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এছাড়াও বেশ কিছু কারণে এটি হয়ে থাকে:
- আকারে ছোট দাঁত
- স্বাভাবিকের চেয়ে কম দাঁত
- বড় আকৃতির চোয়াল
- দাঁত পরে যাওয়া বা তুলে ফেলা
- চোয়ালের আঘাত
- হাড়ের অসুখ
এসব ছাড়াও কিন্তু আরেকটি মজার কারণ রয়েছে। আট থেকে নয় বছর সময়ের দিকে বাচ্চাদের সামনের উপরের দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। একে বলে আগলি ডাকলিং স্টেজ!
এটি নিয়ে আরেকদিন লিখবো ভাবছি। অভিভাবকদের এ সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। দু-এক বছর পর এটি এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। দাঁতে ফাঁকা থাকলে তা খাওয়া, কথা বলা বা অন্য কোন ফাংশনে কোন সমস্যা করে না। এতে ব্যথা বা মাড়ির রোগও সৃষ্টি করে না। এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো সৌন্দর্যগত। পেসেন্টের কমপ্লেইন হলো দেখতে সুন্দর লাগে না। তাই এর চিকিৎসাও খুব সূক্ষ্ম ও শৈল্পিক।
অনেক তো হলো সমস্যা ও কারণ নিয়ে আলোচনা। এবার এটার সমাধান নিয়ে কথা বলা যাক। এর সমাধান কয়েকটি স্টেজে ভাগ করে যদি বলা যায় তাহলে বুঝতে সুবিধা হয়। প্রাইমারি টিথ বা দুধ দাঁতে ফাঁকা থাকলে তাতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এটাই স্বাভাবিক এবং এতে পারমানেন্ট ডেন্টিশন বা ভাত দাঁত সুন্দর হয়।
মিক্সড ডেন্টিশন হলো ছয় থেকে তের বছর বয়স। এসময় মুখে প্রাইমারি টিথ ও পারমানেন্ট টিথ দুটিই বিদ্যমান থাকে। এ সময়ও দাঁতে ফাঁকা থাকা স্বাভাবিক। পরে তা ঠিক হয়ে যায়।
তের বছরের পর অর্থাৎ পারমানেন্ট ডেন্টিশনে দাঁতে ফাঁকা থাকলে চিকিৎসা প্রয়োজন। ফাঁকা যদি একেবারে অল্প থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন কসমেটিক ফিলিং দিয়ে তার সমাধান করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন ক্রাউন ও এটির একটি সমাধান। অনেক বেশি ফাঁকা থেকে গেলে অর্থডন্টিক ট্রিটমেন্ট করে আর্টিফিশিয়াল দাঁত লাগিয়ে নেয়া যায়।
এসব চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য অবশ্যই বিএমডিসি-এর সনদপ্রাপ্ত বিডিএস (ব্যাচেলর অফ ডেন্টাল সার্জারি) ডাক্তার এর শরণাপন্ন হবেন। ডাক্তারের সাইনবোর্ডে বিডিএস (BDS) শব্দটি লেখা আছে কি না খেয়াল করে নেবেন। বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ দন্ত চিকিৎসক বা দাঁতের ডাক্তার নয়। বর্তমানে কোয়াক বা হাতুড়ে দন্ত চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য খুব বেড়ে গিয়েছে। এসব চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়ে অনেকেই ভুল চিকিৎসা করে ক্ষতিগ্রস্ত হোন তাই সচেতনতা জরুরি।
বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে সবাই সামাজিক দূরত্ব, পারসোনাল হাইজিন মেনে চলুন, মাস্ক ব্যবহার করুন। নিজে সুস্থ থাকুন, সবাইকে সুস্থ রাখুন।
ডা. ফারহানা নাজমুন যুথি
প্রভাষক
কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ,
মির্জাপুর, টাঙ্গাইল
পাঠকের মতামত: