কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন পরিষদের ৯ জন সদস্য। ৬টি অভিযোগ এনে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিতভাবে এই অনাস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯জন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরিত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব আমার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
বাহারছড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল হক, ২নং ওয়ার্ডের সদস্য শফিউল কাদের, ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আমান উল্লাহ, ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য হাফেজ আহমদ, ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিক, ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম, ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ইলিয়াছ, সংরক্ষিত ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য মোবিনা খাতুন ও সংরক্ষিত ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য খালেদা বেগম স্বাক্ষরিত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবটি ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়েল-২০১৩ ইং এর ৩৪ ধারার (৪) উপধারার (খ) ধারা মতে করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।আবেদনে বলা হয়েছে, স্ব-স্ব এলাকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর বিধি মোতাবেক ইউপি সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পর থেকে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সমস্ত কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়েল-২০১৩ইং অনুযায়ী পরিচালনা করবার জন্য চেয়ারম্যানকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামতো পরিষদ পরিচালনা করছেন।
এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সমস্ত আইনকানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে পরিষদকে তার পারিবারিক অফিস হিসাবে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। সরকারের বরাদ্ধ অনুদান নিয়ম বর্হিভূতভাবে আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতামূলকভাবে আত্মীয়-স্বজনকে বিলি-বণ্টন করছেন।আবেদনটিতে ৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ সমূহ হলো চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামতো সমন্বয় মিটিং করেন।
যার কোন রেজুলেশন ইউনিয়ন পরিষদে রক্ষিত নেই। জেলেদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত চাউল আত্মসাৎ, কাবিখা প্রকল্প, টি আর প্রকল্পসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজের সভাপতি হিসাবে একজন ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করলেও চেয়াম্যান তার কথামত কাজ করতে বাধ্য করে। এতে উন্নয়ন প্রকল্পের সমস্ত টাকা চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে আত্মসাৎ করেন। জনগণের অধিকার হিসাবে স্বীকৃত, জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ, প্রত্যায়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সরকারি বিধি বিধান অনুসরণ না করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। যার কারণে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ আর্থিকভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
সালিশ বিচারে ঘুষ গ্রহণ, মোটা অংকের টাকার বিনিময় রোহিঙ্গা নাগরিকদের সনদ প্রদান, পরিষদের তহবিল থেকে কোন ইউপি সদস্যদের সম্মানি ভাতা প্রদান না করা, ভিজিডি চাউল বিতরণে স্বেচ্ছাচারিতামূলক তালিকা প্রণয়ন ও নিজের আত্মীয় স্বজনকে ভিজিডি চাউল প্রদানসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন চেয়ারম্যান।চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে সকল ইউপি সদস্যদেরকে খারাপ ব্যবহার করেন। এর প্রতিবাদ করলে গালাগালিসহ হত্যার হুমকি দেন তিনি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। উক্ত মামলাও বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। হাজত বাস করার পর জানুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। আবেদনে অনাস্থা প্রস্তাবটিতে গ্রহণ করে তদন্তপূর্বক চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবী জানান পরিষদের এই ৯ সদস্য।
এ ব্যাপারে বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো মিথ্যা। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে ইউএনও মহোদয়ের কার্যালয়ে রয়েছি। পরে কথা বলব বলে ফোনটি কেটে দেন।
পাঠকের মতামত: