আবদুর রহমান, টেকনাফ::
দাম কম, ক্রেতাও নেই, তাই মাথায় হাত পড়েছে লবণ চাষিদের। সমস্যা সমাধানে বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন তারা। তারপরও লবণের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে মাঠের মধ্যেই স্তূপ রাখা হয়েছে রাখা হয়েছে হাজার হাজার টন কাঁচা লবণ। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার খুব পরিচিত দৃশ্য এখন এটি। চাষিদের অভিযোগ, একটি চক্র লবণ আমদানি করার জন্য দেশীয় লবণ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে টেকনাফে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। এই উপজেলায় তিন হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন হাজার হাজার চাষি ও শ্রমিক। তবে গত বছর শুধু টেকনাফ উপজেলা ১ লাখ সাড়ে ১৪ হাজার টন লবণের চাহিদা পূরণ করেছে। এসময় সরকার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ইতোমধ্যে ৩৪ হাজার মণ লবণ উৎপাদিতও হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে- সীমান্তের নাফনদের কিনারায় সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও হ্নীলায় দেড় হাজার একর জমিতে লবণের স্তূপ পড়ে আছে। প্রতিটি স্তূপে ৪০-৫০ মণ করে লবণ আছে। এছাড়া টেকনাফ উপজেলায় সদর, হোয়াইক্যং ও শামলাপুর ইউনিয়নে আরও দেড় হাজার একর জমিতে লবণের উৎপাদিত হয়েছে। গুটা উপজেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদিত পাঁচশ’ মণ লবণ মাঠে ও গর্তে পড়ে আছে। লবণের মূল্য পড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। জানা গেছে, মো. শরীফ হোসেনের ৭০ হাজার টন, মো. সালামের ৫০ হাজার টন, মো. শফিক মিয়ার ৩০ হাজার টন, হাফেজ উল্লাহ ২৫ হাজার টন, মো. সেলিমের ২০ হাজার টন লবণ রয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচ শতাধিক চাষির উৎপাদিত হাজার হাজার মণ লবণ মাঠের গর্তে পড়ে আছে।
এ প্রসঙ্গে সাবরাংয়ের লবণ চাষি মোহাম্মদ শরীফ হোসেন বলেন, ‘মিল মালিক তথা বড় বড় কোম্পানিগুলো লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় মাঠপর্যায়ের চাষিরা দেউলিয়া হওয়ার পথে। ধারদেনা করে লবণ চাষ করে বিনিয়োগও তোলা যাচ্ছে না। বলতে গেলে পানির দামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না লবণ। উৎপাদন যত বেশি হচ্ছে, লবণের দামও তত কমে যাচ্ছে।’ তার উৎপাদিত ৭০ হাজার মণ লবণ মাঠের গর্তেই পড়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি একর লবণ মাঠের জন্য খরচ পড়েছে ৫০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে লবণ বিক্রি করে একর প্রতি ১০ হাজার টাকাও পাওয়া যায়নি।’
লবণ চাষি সেলিম ও সালাম জানান, শীতকাল থেকে তারা লবণ চাষ শুরু করেন। বৃষ্টি শুরু হলে চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর পর্যাপ্ত রোদ ও বৃষ্টিপাত কম থাকায় লবণ উৎপাদন ভালো হয়েছে। বর্ষার এই সময়ে সবাই লবণ বিক্রি শেষ করবেন। কিন্তু এমন সময় হঠাৎ লবণের দাম কমে গেছে। ডিলাররা লবণের দাম প্রায় অর্ধেক বলছেন। ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অন্য বছর প্রতি মণ লবণ যেখানে বিক্রি হতো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, সেখানে এখ দাম দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়া জানান, বর্তমানে মাঠজুড়ে বড় বড় গর্ত ভরিয়ে হাজার হাজার মণ লবণ স্তূপ করে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। কিন্তু লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কেউ ভাবছে না। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করে দাদনের টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না অনেকে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) টেকনাফের ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে এই সীমান্তে ৩৪ হাজার মণ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু লবণের দাম কম হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত: