দুর্ঘটনা ঘটলেই মানুষ নড়েচড়ে বসে। নইলে কারোর কোনো খবর থাকে না। নগরীর বাসা-বাড়িতে গ্যাসলাইনের সংযোগ দেওয়ার পর থেকে আর কখনো তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। কিন্তু সবকিছুর ক্ষয় আছে। ফলে গ্যাসলাইনের পাইপেও সমস্যা রয়ে যায়। আয়রন, মরিচা জমে লোহার পাইপেও ক্ষয় ধরে।
আর এই জরাজীর্ণ পুরানো গ্যাসলাইনের পাইপই একসময় রূপ নেয় আজরাইলে। কেড়ে নেয় অনেক নিষ্পাপ প্রাণ। অকালে ঝরে যায় অনেকের অনেক রঙিন স্বপ্ন। শুরু হয় প্রিয়জনকে ছেড়ে বেঁচে থাকার কঠিন পথচলা। সারাজীবনের এই কান্নার জন্য দায়ী মানুষের অসচেতনতা।
নগরীতে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে প্রায়ই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে নগরের পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোড এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের নিচতলার বাসায়। রোববার (১৭ নভেম্বর) পুরানো গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিমিষেই ঝরেছে সাতটি তরতাজা প্রাণ। আহত হয়েছে কমপক্ষে আরো ১২ জন। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় স্বামী হারালো স্ত্রীকে, সন্তান হারালো তার মাকে, স্ত্রী হারালো তার স্বামীকে, সন্তান হারালো তার বাবাকে। এছাড়াও লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো আশপাশের অনেকের।
এই দুর্ঘটনায় অভিষেক বড়ুয়া এবং অভিজিৎ বড়ুয়া হারালো তাদের মা স্কুল শিক্ষিকা এনি বড়ুয়াকে। অ্যা ডভোকেট আতাউর রহমান হারালেন তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার ও বড় ছেলে আতিকুর রহমানকে। আতিফুর রহমান হারালো তার মা আর বড় ভাইকে। চা খাওয়া হলো না নুরুল ইসলামের, ফিরে যাওয়া হলো না কাছের মানুষের কাছে। এখানেই শেষ নয়, এই দুর্ঘটনায় এমন অনেকে প্রাণ হারিয়েছে, যাদের পরিচয়ও মেলেনি এখনো।
প্রত্যক্ষদর্শী মোজাম্মেল হক জানান, জরাজীর্ণ গ্যাসলাইনের পাইপ থেকে গ্যাস লিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রচুর। যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কিন্তু আমরা আগে কেন সচেতন হই না! ঘটনা ঘটার পর কেন এত হৈচৈ! এ গ্যাসলাইন যদি আগে চেক করা হতো, তাহলে আজ এতগুলো প্রাণ ঝরে যেত না। মালিকদের উচিত ক’দিন পরপর গ্যাসলাইন পরীক্ষা করা।
প্রত্যক্ষদর্শী আবু সালেহ দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গ্যাসলাইনটি অনেক পুরানো। আয়রনে পুরো পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। লিকেজ থাকার সম্ভাবনাতো আছেই। এসব থেকে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, কিন্তু তাও বাড়ির মালিকরা সচেতন না। এগুলো সারানোর কোনো উদ্যোগ উনারা নেন না।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসীন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গ্যাসলাইনটি অনেক পুরানো হওয়ায় লিকেজ বা অতিরিক্ত গ্যাস জমে ছিল, এটাই ধারণা করা হচ্ছে। আর তখন কেউ চুলা জ্বালানোর চেষ্টা করলে তখনি বিস্ফোরণটা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জসীম উদ্দীন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গ্যাসলাইন পুরানো ছিল। লিকেজ হতে পারে। নাশকতা ছিল কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: