নিজস্ব প্রতিবেদক::
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৮টি ইটভাটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব ভাটা। ইটভাটার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। এসব অবৈধ ইটভাটার কারণে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি। পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে জীববৈচিত্র্য পড়ছে হুমকিতে।
তাছাড়া অবৈধ ইটভাটা গুলোর মধ্যে এ-এস-বি, বি-এইচ-বি, এ-এফ-ডি, এইচ-এস-বি, ডি-এস-বি, এইচ-কে-বি, বি-বি-এম, কে-আর-এস, কে-আর-ই, এইচ-এ-জেট-আই সহ আরও একাধিক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।
এদিকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় “সারাদেশের ৩ হাজার ৪৯১টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান”৷
সরেজমিনে দেখা যায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের আজুখাইয়া ফকির পাড়া এলাকায় ইলিয়াস নামের জনৈক ব্যক্তি অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তুলে বনের কাঠ পুড়িয়ে পুরোদমে চলছে কার্যক্রম। ইতিমধ্যে ভাটায় ইট পুড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে গত ২৭ নভেম্বর সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে ইটভাটা কার্যক্রম সম্পাদনের দায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান ইতু ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে ভাটার মালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। অভিযানের সময় অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা ও এ সংশ্লিষ্ট কাজে বিরত থাকতে স্থানীয়দের সতর্ক করেছিলেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান ইতু।
স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে গভীর পাহাড় ও বনের ভেতর এ রকম অন্ততপক্ষে ১০/১২ টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। যেগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো ধরনের ছাড় পত্র নেই। তাছাড়াও গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেলে একই সাথে পালিয়ে যায় উক্ত ইটভাটার মালিক ঘুমধুম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খালেদ সরওয়ার হারেছ।
ইটভাটাটি প্রকৃত মালিক পালিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে রয়েছে ইটভাটার কার্যক্রম। হারেছের অবর্তমানে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রসিদ আহাম্মদ ও তার ছোট ভাই মো. ইলিয়াস ইটভাটাটি পরিচালনা করছেন।
ইটভাটার মালিক ইলিয়াছের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইটভাটাটি পরিচালনা করার জন্য আমরা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে অফিসিয়ালি কাজ করছি। তবে এখনো অনুমতি পায়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটাটির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনকে টাকা দিলে অনুমতি মেলে। সময় মতো টাকা না দিলে অভিযান করে আমাদের ক্ষতি করে, জরিমানা করে। এমন কি টাকা দিলে বাংলাদেশে সব কিছু করা সম্ভব বলেও দাবি করেন তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, যে সকল ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। সে সকল ইটভাটার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
তাছাড়াও পরিবেশ ও বন ধ্বংস করে কেউ নতুন করে ইটভাটা তৈরি করলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাজহারুল ইসলাম।
পাঠকের মতামত: