কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে আবার দুই রোহিঙ্গাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহতরা হলেন কুতুপালং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘সি’ ব্লকের বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহর ছেলে আয়াত উল্লাহ এবং মোহাম্মদ কাসিমের ছেলে মোহাম্মদ ইয়াছিন।
এ নিয়ে গত ১২ দিনেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছে ছয় রোহিঙ্গা। আর গত এক বছরে এই সংখ্যা ১৮। ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, গতকাল নিহত দুই রোহিঙ্গা ইসলামী মাহাজ নামের রোহিঙ্গা সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তাঁরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ২২ অক্টোবর উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি মাদরাসায় ছয়জনকে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসীরা। ওই ছয়জনই ইসলামী মাহাজ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া আরসার হাতে আরো চারজন খুন হয়েছেন, তাঁরাও ইসলামী মাহাজের সদস্য। এই খুনোখুনিতে আতঙ্কে আছে সাধারণ রোহিঙ্গারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী মাহাজ গ্রুপ সমর্থিত বেশির ভাগ নেতা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলেন। এ ছাড়া তাঁরা ক্যাম্পে সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সহযোগিতা করেন। এ কারণে ইসলামী মাহাজের বেশির ভাগ সদস্যকে টার্গেট করে আরসা বা আল ইয়াকিন।
সম্প্রতি একটি অডিও রেকর্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে, ‘ইসলামী মাহাজের যে ভাইয়েরা আছে, তোমরাও আমাদের সাথে এসো, একসাথে দুশমনের মোকাবিলা করি। ’ রোহিঙ্গারা বলছে, অডিওর ওই কণ্ঠ আরসা কমান্ডার আতা উল্লাহ জুনুনির।
কুতুপালং ক্যাম্পের এক রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশের পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে ভেবেছিলাম রাখাইনে মগদের অত্যাচার ছেড়ে পালিয়ে এসে এখানে অন্তত শান্তি পাব। কিন্তু এখানে এখন ভয় ও আতঙ্কে আমাদের দিন কাটছে। ক্যাম্পজীবন আমাদের কাছে খুবই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ’
মোহাম্মদ হামিদুল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্পের বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডে সশস্ত্র সংগঠন আরসার হাত রয়েছে। সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্যের হাতে রয়েছে অস্ত্র।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নিরাপত্তা আরো জোরদার করার দাবি জানিয়েছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মোতায়েনেরও দাবি তাদের। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। সূত্র কালের কণ্ঠ
পাঠকের মতামত: