কক্সবাজার, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

কে তাহলে বীজ বুনবে?

গলে পড়ছে তাতানো ঘাম। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় উঠি। বোঝা যায় চালক এ শহরে নতুন। ঘাড়ের লালডোরা গামছাটির মতোই। জানা যায়, এ পেশায়ও নতুন। সেনপাড়া গ্রাম থেকে ‘মনের জ্বালায়’ পালিয়ে এসেছেন ঢাকায়। ‘কেন পালাতে হলো?’ গন্তব্যে পৌঁছতে পৌঁছতে শুনি চালকের গ্রাম-পালানোর সেই নির্দয় কাহিনী। বেহায়া কিছু গাড়ির হর্ন মাঝে মধ্যে কাহিনীর কোনো শব্দ গিলে ফেললেও এ কাহিনী আমার কানের পর্দার মুখস্থ হয়ে গেছে। চালকের গল্পটি আগাপাছতলা ঠাহর করতে পারি। দুই মাস ধরে গত কয়েক বছরে ঢাকায় পালিয়ে আসা রিকশাচালকদের কাছ থেকে এই একই কাহিনী শুনে চলেছি আমরা। বিস্ময়করভাবে এরা কেউই একই এলাকা থেকে আসেননি। কেউ এসেছেন হাওড় থেকে, কেউ চলনবিল, কেউ সমুদ্র উপকূল, কেউ সুন্দরবন, কেউ মেঘালয়ের পাদদেশ, কেউ বরেন্দ্র, কেউ তিস্তা-যমুনা অববাহিকা, কেউবা চরাঞ্চল কি দূর দ্বীপ থেকে। তো এ চালকের নাম মিল্লাত আলী। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নে বাস। চালক জানালেন, গত কয়েক বছর বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে কাজ কমেছে। মানুষও পাওয়া যায় না। এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের দাম মেলেনি। গত কয়েক বছর টেনেটুনে টিকে থাকতে পেরেছিলেন। এবার আর দম ফেলতে পারেননি। এক মণ ধান ফলাতে কেবল টাকাই খরচ গেছে ৭০০ টাকার ওপর। এ হিসাব কেবল উফশী বীজ, রাসায়নিক সার, বিষ, সেচ আর ডিজেল খরচ। রক্ত আর মগজ পানি করা পরিশ্রমের হিসাব তো বাদই রইল। সেই ধান কীভাবে ৭০০ টাকার নিচে বেচবেন? আর বেচবেনই-বা কোথায়? কত মাস্তান, মহাজন দখল করে রেখেছে হাটবাজার। ‘সরকার তো প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, সরকারের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ধান বিক্রি করবেন, অনিয়ম হলে প্রতিবাদ করবেন। ইউনিয়ন পরিষদের কাছে বিচার চাইবেন। আপনারা কৃষকরা প্রতিবাদ করেন না বলেই এ দুরবস্থা। আপনি তেভাগা সংগ্রামের মানুষ। সরকার কৃষকের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে কত কিছু করছে কিন্তু সব অনিয়ম তো আর সরকার একা সামাল দিতে পারে না। আপনারা কৃষি ছাড়লে আমরা বাঁচব কাদের নিয়ে?’ চালক আমার দিকে ‘ঢাকা শহর আইস্যা আমার আশা ফুরাইছে’ গানের ভঙ্গিতে তাকান। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘কলে মা মার খায়, না কলে মা কুত্তা কামড়ায়।’ গন্তব্যে নেমে যাই, দেখি লাল-নীল রঙের ঢাকা শহরে নিদারুণভাবে হারিয়ে যাচ্ছেন একজন কৃষক। বাংলাদেশের কৃষক। রিকশা নয়, দেখি সুরমা রঙের তাগড়া মহিষ নিয়ে কাসেম আলী লাঙল কাঁধে নেমেছেন বরেন্দ্রর ধাপ খেলানো জমিনে। ঝিঙাশাইল ধানের ভাত, আলুর তরকারি আর তেঁতুলের খাটা গামছায় বেঁধে নানার সঙ্গে হাঁটছেন শিশু মিল্লাত আলী। পরিবার থেকে কৃষির বর্ণমালা শিখে শিখে শিশু মিল্লাত আলী একদিন কৃষক যুবক হয়ে ওঠেন। দাদি-নানির আমলের রাঁধুনিপাগল, মালশিরা, রঘুশাইল, মাগুরশাইল, দাদখানি, কালিবোরো, ষাইটাবোরো, তুলসীবোরো, সাদাবোরো, লাইড়াবোরো, শনি কি কালামানিক ধানেদের অনেকের মৃত্যু নিজের চোখে দেখেছেন। পরিবারে শুনেছেন এসব ধানের হারিয়ে যাওয়ার নৃশংস কাহিনী। বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প থেকে শুরু করে গ্রামের রাস্তায় সার-বিষের দোকানের খবরদারি কি ধানবীজ কেনার জন্য নানা কিসিমের ‘ভিলেজ পলিটিকস’ মিল্লাত আলীর যৌবন বয়সে শেখা। মিল্লাত আলী একজন কৃষকই হতে চেয়েছিলেন। হয়তো অন্য কোনো পেশা বা পরিচয়ের জীবন বেছে নেয়ার জায়গাও সেখানে ছিল না। গ্রামে কষ্ট ছিল, এ ধানে চিটা তো এবার সারের দাম বেশি। বেশি দামে বীজ কিনেও দানা আসেনি। আবার ফলন হয়েছে দেদার কিন্তু ফসলের দাম নেই কোনো। কিন্তু কষ্টের জীবনে গ্রামে তার একটা পরিচয় ছিল, ঠিকানা ছিল, একটা খোয়াব ছিল। নতুন এই অচিন শহরে তার কিছুই নেই। এখানে প্রতিদিন মিল্লাত আলীরা হারিয়ে যান। আর এ মিল্লাত আলীদের হারানোর গল্প পেটবোঝাই করেই ঢাকা আরো ‘প্রাণহীন’ শহর হয়ে ওঠে। কারণ এখানে কেউ কাউকে চেনে না, এখানে কোনো সমাজ নেই, কারোর সঙ্গে কারোর যেন কোনো দরবার বা সোহাগ নেই।

২. আর এ শহরের মানুষের সঙ্গে ধানের সম্পর্কটি ভিন্ন ধাঁচের। বোরো মৌসুমে পাহাড়ি ঢল নামলে হাওড়-ভাটির মানুষের মতন এদের বুক কাঁপে না। দীর্ঘ খরায় ধান পুড়লে বরেন্দ্রবাসীর মতন এখানে কারো কলিজা তড়পায় না। শহরের একেকটি পরিবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবচেয়ে কম খরচ করে চালের পেছনে। পিত্জাহাটের একটি পিত্জার দাম এক মণ ধানের চেয়ে বেশি। এক প্যাকেট চিপসের দাম এক কেজি ধানের চেয়ে বেশি। যে শহরের মানুষের সঙ্গে ধানজীবনের কোনো আগাপাছতলা সম্পর্ক নেই, সেই শহরেই দেশের ধানের ন্যায্যমূল্য নির্ধারিত হয়। দেশের কৃষিনীতি তৈরি হয়। আসলে চলতি লেখাটি বাংলাদেশের ধানের দাম নিয়ে চলমান তর্ককে ঘিরে। বলা ভালো, বোরো মৌসুমে উৎপাদিত উফশী ও হাইব্রিড ধানের দাম। স্মরণে রাখা জরুরি, এখনো দেশে আমন, আউশ, বোরো মৌসুমে কিছু স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ হয়। জুম ধানের আবাদ হয়। স্মরণ রাখা জরুরি, ধানের দামের চলমান সংকটটি কিন্তু জটিল হয়েছে ‘বোরো মৌসুমের উৎপাদন ঘিরে’। এটিও স্মরণ করা জরুরি, এ মৌসুমে ব্যাপক হারে ধান আবাদ কীভাবে শুরু হলো? কীভাবে? তথাকথিত ‘সবুজ বিপ্লবের’ মাধ্যমে। এ মৌসুমে এখন ধানের ব্যাপক চাষ হয় এবং দানার উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়। এটিও মনে রাখতে হবে এ মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি করপোরেট কোম্পানির সার-বীজ-যন্ত্রপাতি-জ্বালানি ও বিষের বাণিজ্য হয়। যত বেশি ধান, তত বেশি মনসান্টো বা সিনজেন্টা কোম্পানির মুনাফা। করপোরেট কোম্পানির ব্যবসা চাঙ্গা করে কৃষক যে ধান ফলাতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই ধানের ন্যায্যমূল্য নিয়েই আজ প্রশ্ন উঠেছে। তাহলে এ ধানের ন্যায্যমূল্যের যাবতীয় দায়ভার কেন সরকার নেবে? কেন দুনিয়া কাঁপানো কৃষি করপোরেট কোম্পানিগুলোকে এ প্রশ্ন করা হবে না? যদিও চলতি আলাপটি কৃষির এ করপোরেট দখল নিয়ে বিস্তর তর্ক তুলতে চাইছে না। চলতি আলাপখানি ধান ঘিরে এ জনপদের এক মৌলিক মনস্তত্ত্ব ও নিম্নবর্গের দর্শনকে হাজির করতে চায়। ধান কি কোক-পেপসি বা মোবাইল-ল্যাপটপের মতো কোনো ‘বাজারি পণ্য’? কেবল বাজারনির্ভর দরদাম আর নানা স্তরের মুনাফার মুদ্রার হিসাব দিয়ে কি ধানের দাম যাচাই হতে পারে? যদিও নিদারুণভাবে এই নয়া উদারবাদী বিশ্বায়িত বাজারে ‘ধানকেও’ এখন এক ‘বাজারি পণ্য’ করে ফেলা হয়েছে। তো মুদ্রামানে ধানের ন্যায্যমূল্য আসলেই কত হতে পারে? রাষ্ট্র এ বছর এক মণ ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ৪০ টাকা। একজন কৃষকের কাছ থেকে এক টন করে ধান কিনছে সরকার। অথচ এই বোরো মৌসুমে ধান ফলেছে অনেক। প্রায় দুই কোটি টন। এমনকি গত আমন মৌসুমের অনেক ধান রয়ে গেছে চাতালে। বেড়েছে চালের উৎপাদন ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সব কৃষক সরকারের বিক্রয়কেন্দ্রে ধান বেচতে পারছে না। কৃষককে এলাকাভেদে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান বেচার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। ধানসহ কৃষি উৎপাদনগুলো এমন যে এসবের সঙ্গে একেকটি পরিবার, প্রতিবেশী এবং একটি গ্রামের নানামুখী সম্পর্কের সূত্র থাকে। সামাজিক ইতিহাস ও বাস্তুতন্ত্রের জটিল অবদান থাকে। তাহলে এই নয়া উদারবাদী বাজারে একটি বারবি পুতুলের দাম ও কৃষকসমাজের উৎপাদন কি একই নিরিখে মাপা হবে? একই মুদ্রানির্ভর ব্যবস্থার চশমায়? এ নিয়ে কি কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না? ধানসহ কৃষি উৎপাদন নিয়ে রাষ্ট্রকে মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে এক কৃষিপ্রধান রাষ্ট্রের দর্শন স্পষ্ট হওয়া জরুরি। বোরো, আমন ও আউশ মৌসুমের ধানের দর কেমন হবে? দেশের ৩০টি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের ধানের দর কি একই রকম হবে? যেসব অঞ্চল পাহাড়ি ঢল, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, খরা, শৈত্যপ্রবাহ সামাল দিয়েছে? রাসায়নিক পদ্ধতি ও প্রাকৃতিক জৈব উপায়ে উৎপাদিত ধানের দরে কি ভিন্নতা থাকবে না?

৩. ধানের ন্যায্যমূল্য নিয়ে তর্ক চলছে। মনে পড়ছে ২০১০ সালে করা খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ে একটি প্রতিবেশগত সমীক্ষা কাজের কথা। দহগ্রাম-আঙ্গুরপোতা ছিটমহলের (বিলুপ্ত) কৃষকরা বলেছিলেন, যাতে উৎপাদন খরচ থেকে বিক্রির পর একটা লাভ থাকে তা-ই ন্যায্যমূল্য। ২০০৯ সালে দহগ্রাম ছিটমহলের (বিলুপ্ত) কৃষকরা বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান সরকারের কাছে প্রতি মণ বিক্রি করেন ৫৬০ টাকা এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন ৩৫০-৪০০ টাকায়। কিন্তু এক মণ ধান চাষ করতে তখন তাদের খরচ পড়ে প্রায় ৬০০ টাকা। ছিটমহল সমস্যার সমাধান হলেও সেখানকার কৃষকের ধানের মূল্যসংকট কাটেনি এখনো। রাষ্ট্রের কৃষিনীতি আছে, কৃষিবিষয়ক নানা স্তরের কাঠামো আছে কিন্তু বছর বছর ধানসহ কৃষি উৎপাদনের এ মূল্য সংকট কেউ গভীরভাবে তলিয়ে দেখেনি। কৃষি মন্ত্রণালয় চাষ ও ধান সংগ্রহের কাজটি করে। ধান ও চাল গুদামে গেলেই এ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যায়। আবার চাল আমদানি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর রাষ্ট্র উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এটি তো এমন নয় যে চট করেই এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এটি তো অবশ্যই রাষ্ট্রের নজরে আছে, নথিতে আছে। তাহলে উৎপাদন বেশি বা কম হলে রাষ্ট্রের করণীয় কী হবে? উৎপাদন বেশি হলে রাষ্ট্র তার নাগরিকের উৎপাদনের সুরক্ষা কীভাবে দেবে? হয় রাষ্ট্র এ উৎপাদন কিনবে বা মজুদকরণের কোনো বন্দোবস্ত করবে বা এ উৎপাদন বহুমুখীকরণের ব্যবস্থা করবে এবং হয়তো দেশের সামগ্রিক চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করবে। রাষ্ট্র যখন দেখল নিজ দেশেই ব্যাপক শস্য উৎপাদন হচ্ছে, তবে কেন রাষ্ট্র চাল আমদানির অনুমোদন দিল? কেন ধান কেনাবেচা নিয়ে ধানকল ও চাতাল ব্যবসায়ীরা বাহাদুরি করে? রক্তজল করা ফসল বিক্রি করতে এসে কেন এখনো কৃষক হয়রানির শিকার হন? রাষ্ট্রকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ধানের সঙ্গে জড়িত সব মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের ধানের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। ধানসহ কৃষি উৎপাদন নিয়ে চলমান সংকট সুরাহায় রাষ্ট্রের প্রশ্নহীন ঘুম ভাঙতে হবে। রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ধানের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. মনে আছে, সেই যে গণি মিয়া ছিলেন একজন গরিব চাষী। নিজের জমি ছিল না বলে পরের জমি চাষ করতেন। গণি মিয়ারই ছেলে মিল্লাত আলী। গণি মিয়ার কাছ থেকে মিল্লাত আলী শুনেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানের আবাদ হয়নি বলে অনেক আকাল হয়েছিল। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১৮৭১ সালে মোটা চালের মূল্য ছিল এক হন্দরের জন্য ৫ শিলিং ৭ দশমিক ৫ পেন্স (১০ টাকায় এক পাউন্ড)। ১৮৫৪ সালে চালের মূল্য ওই দরের অর্ধেক ছিল। ১৮৬৬ সালে দুর্যোগের ফলে ফসল নষ্ট হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন চালের মূল্য প্রায় তিন গুণ বেড়ে যায়। ১৮৭৪ সালে আবার বরেন্দ্র অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৮৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর চালের দাম ১ টাকায় ১২ সেরে স্থায়ী থাকে কিছুকাল। সাম্প্রতিক সময়ে হাওড়াঞ্চলে পাহাড়ি ঢলে ধানের জমিন সব তলিয়ে যাওয়ার পরও চালের দাম বেড়ে গিয়েছিল। ধান এখনো আমাদের গ্রামীণ সমাজের বেঁচে থাকার কেন্দ্রবিন্দু। ধানের ফলন বিপর্যয় বা ধান থেকে কৃষকের উদ্বাস্তুকরণ কোনোভাবেই কোনো শুভলক্ষণ নয়। এটি বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় এক নয়া সংকট ও সন্ধিক্ষণকে চিহ্নিত করছে। একে সার্বিকভাবে আমলে নেয়া জরুরি। দেশের প্রতিটি নাগরিককেই ধানের এ চলমান যন্ত্রণা বোঝা জরুরি।

৫. ফসল আবাদ ও উত্তোলন মৌসুমে বছর বছর কৃষক সংকট দেখা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘শ্রমিক সংকট’। কেন হচ্ছে? এ দেশে তো কৃষি গড়ে উঠেছে পরিবারের যৌথ কাজের এক সমন্বিত রূপ হিসেবে। কিন্তু গ্রামীণ সেই যৌথ পরিবার ও কৃষিজমিগুলো ভেঙেচুরে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এখন কেবল কৃষিকাজ নয়, গ্রামীণ মানুষ যুক্ত হচ্ছে নানামুখী আয়মূলক কাজে। মেয়েরা চলে যাচ্ছে গার্মেন্টে, পুরুষদের অভিবাসন ঘটছে বড় শহরগুলোয়। গ্রামের কৃষিকাজ ধরে রাখছে মূলত পরিবারের প্রবীণজন আর শিশুরা। কৃষি মৌসুমে তাই পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাওয়া যাচ্ছে না। কে তাহলে বুনবে বীজ, কারা তুলবে ঘরে ফসল? এ বছর ফসল কাটার মৌসুমে কৃষক সংকট তীব্র হওয়ায় জেলা প্রশাসক থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী তরুণ থেকে সাংস্কৃতিক কর্মী অনেক ‘অকৃষক’ মানুষই জমিনে নেমেছেন। কিন্তু এভাবে তো এ সংকট সুরাহা হবে না। হওয়ার কথাও নয়। মানছি দেশ এক উন্নয়নের ক্রান্তিকালে রয়েছে। এ ক্রান্তিকালে নিদারুণ সংকটে পড়েছে দেশের কৃষি। রাষ্ট্রকে এখনই মজবুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামীর কৃষির চেহারা বিষয়ে। অবহেলা, অনাদর নয় বা কেবল গ্রামীণ কিছু কৃষক পরিবারের ওপর দেশের কৃষির যাবতীয় দায়ভার না চাপিয়ে রেখে দেশের সবাইকেই কৃষি সংকট মোকাবেলায় অগ্রণী হওয়া জরুরি। আর এখনই।

লেখক: গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ

পাঠকের মতামত: