কক্সবাজার, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনা ভাইরাসের প্রভাব দেশের পর্যটনে

চৌধুরী আকবর হোসেন::

বিশ্বজুড়ে এখন নতুন আতঙ্ক করোনা ভাইরাস।এই ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটন খাতে। কমে গেছে বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আসা। একইসঙ্গে শুধু চীনই নয়, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে বাংলাদেশিদের ভ্রমণের হারও কমেছে।এ কারণে নতুন করে সংকটের মুখে পড়েছেন দেশের পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আসার হার কমেছে। অনেকেই আগে থেকে ভ্রমণের জন্য বুকিং করলেও, এখন তা বাতিল করছেন। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে চীনসহ  সিঙ্গাপুর,থাইল্যান্ড,মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার ট্যুর প্যাকেজ,এয়ার টিকিট বুকিং করলেও করোনা আতঙ্কে তা বাতিল করা হচ্ছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন গন্তব্যের ফ্লাইটে যাত্রীর সংখ্যাও কমেছে।

ভিয়েতনামের ১১ নাগরিক ‘বিজকন হলিডেজ’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আসার কথা থাকলেও তারা ট্যুর বাতিল করেছেন। অন্যদিকে ভারতের দার্জিলিং যেতে ৬৮ জন ট্যুর প্যাকেজ নিয়েছিলেন একই ট্যুর প্রতিষ্ঠান থেকে। এছাড়াও বিজকন হলিডেজ থেকে সিকিমে ৩০ জন ও  ভুটানে ৫২ জন যাওয়ার জন্য ট্যুর প্যাকেজ নিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই তাদের বুকিং বাতিল করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিজকন হলিডেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিম আমিন শোভন বলেন, ‘করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ভ্রমণ বাতিলের হার বেড়েছে। অনেকে বুকিং দিলেও তা বাতিল করছেন। নতুন করে কেউ ট্যুরের জন্য আসছেন না। চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডে ভ্রমণ বাতিলের হার সব চেয়ে বেশি। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ভ্রমণ বাতিল হচ্ছে। ফলে  ট্যুর অপারেটরদের জন্য এটি নতুন একটি সংকট।

এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। যদিও সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভারত, জাপান, নেপালসহ অনেক দেশেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের  এয়ারলাইন্স চীনে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ না হলেও কমেছে ফ্লাইটের সংখ্যা। সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও যাত্রী সংকটে বর্তমানে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। যাত্রী কমে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে চীনে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে চায়না সাউদার্ন। দেশটিতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনাকারী আরও তিনটি এয়ারলাইন্সও ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে।

ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রী কমে যাওয়ায় সাতটির বদলে এখন তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। চীন থেকে ফেরত আসার যাত্রী থাকলেও ঢাকা থেকে চীনগামী যাত্রী একেবারেই কম।

মানুষের মধ্য থেকে করোনা ভীতি দূর করতে কাজ করা উচিত বলে মত দেন প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল লিমিটেড  (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আস্থা তৈরি করতে হবে। যেন পর্যটকরা বাংলাদেশ আসতে ভয় না পান। এজন্য একটি ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিম’ থাকা দরকার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে। এই টিম সরকার, ব্যবসায়ী, এয়ারলাইন্স সবাইকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবে। ফলে মানুষজন যখন জানবে বাংলাদেশে যথেষ্ট ভালো পরিবেশ রয়েছে— তারা এখানে আসতে  ভয় পাবেন না। এখন প্রায় সবাই একই ক্রাইসিসের মধ্যে আছেন। বিদেশি পর্যটকরা  বুকিং  বাতিল করছেন। অথচ তাদের জন্য হোটেল ও গাড়িসহ অন্যান্য সার্ভিস বুকিং দেওয়া ছিল।’’ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলে তিনি জানান।

‘জার্নি প্লাস’ নামের একটি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তৌফিক রহমান। সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে  তৌফিক রহমান বলেন, ‘কয়েকটি দেশ থেকে পর্যটক আসার কথা ছিল। কিন্তু ক্রমাগত বুকিং বাতিল হচ্ছে। স্লোভেনিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে থেকে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল কয়েকটি গ্রুপের। কিন্তু তারা ভ্রমণ বাতিল করেছে। অথচ তাদের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম।

পাঠকের মতামত: