ইকরাম চৌধুরী টিপু, কক্সবাজার::
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গত তিন দিনে এক রোহিঙ্গাসহ করোনায় চারজন মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৬৬ জন। তাদের মধ্যে ২৫ জনই রোহিঙ্গা শরণার্থী।
এদিকে, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা এবং পাঁচ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন চলছে ঢিলেঢালাভাবে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জেলায় করোনা শনাক্তের হার এখনও ১০-এর উপরে। কোনো কোনো দিন ১২ শতাংশ, আবার কোন দিন ১৩ কিংবা ১৪ শতাংশের উপরে চলে যাচ্ছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। এ কারণে জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটি সীমান্তে দুই উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফ এবং পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ২১ মে থেকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। আগামী ৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন ও রেড জোন কার্যকর থাকবে।’
সিভিল সার্জন বলেন, ‘তবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় লকডাউন পালন হচ্ছে ঢিলেঢালা ভাবে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং পুলিশ যতক্ষণ মাঠে থাকে ততক্ষণ লকডাউন কার্যকর থাকে। এরপর মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষ্মণই নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অবস্থা আরও নাজুক। ঘনবসতি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকর করা অনেকটা কঠিন।’
এ অবস্থায় কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন ওই জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৮ জনের শরীরে। করোনায় মারা গেছে ১১২ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা মারা গেছে ১৭ জন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইদানীং সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। সংক্রমণ রোধে রোহিঙ্গা শিবিরসহ পুরো জেলায় কঠোর লকডাউন দরকার।’
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা থাকত তিন থেকে পাঁচজনের মধ্যে। এখন দৈনিক গড়ে ৮০ জনের বেশিও শনাক্ত হচ্ছে।’
অনুপম বড়ুয়া বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। কাজের জন্য রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে চলে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। এছাড়া শরণার্থীদের মানবিক সেবায় যুক্ত এনজিও কর্মীরা প্রতিদিন ক্যাম্পে যাওয়া-আসা করছেন।’
ডা. অনুপমের মতে, এনজিও কর্মীদের অনেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে (কক্সবাজারের বাইরের জেলায়) গিয়েছিলেন, এখন ফিরে এসে ক্যাম্পে যাতায়াত করছেন। তাদের কারও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।’
সংক্রমণ রোধ করতে হলে উখিয়া ও টেকনাফের পাশাপাশি ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে পৃথক রেড জোন ঘোষণা করা দরকার বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক।
পাঠকের মতামত: