কক্সবাজার, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে এক কোটি ইয়াবার চালান লুট!

কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাটস্থ বাঁকখালী নদী থেকে খালাসের সময় ইয়াবার বিশাল একটি চালান লুট হয়েছে।

কয়েকটি সূত্রের দেয়া তথ্যমতে লুট হওয়া চালানে প্রায় এক কোটি ইয়াবা ছিল। ইয়াবা লুটের বিষয়টি স্বীকারও করছে পুলিশ।

তবে পুলিশের মতে, সেখানে ইয়াবা ছিল প্রায় ১০ লাখ পিচ। ঘটনাটি নিয়ে পুরো শহরজুড়ে তোলপাড় চলছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে এই ইয়াবা লুটের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের মতে, এক কোটি বা ১০ লাখ পিচ যা-ই হোক না কেন, ইয়াবা লুটের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পায়নি।

তবে অনেকের দাবি, পুলিশ সবকিছু জেনেও চুপ হয়ে আছে। পুলিশের এমন রহস্যজনক আচরণ কাজে লাগিয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইয়াবা লুটে জড়িত অনেকেই।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহাজান কবির বলেন, ইয়াবা লুটকারিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। পুলিশি তদন্তে ১০ লাখ ইয়াবা লুটের সত্যতা পাওয়া গেছে। ১০ লাখ বা ১ কোটি যা হোক না কেন আমাদের (পুলিশের) কাজ হচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ইয়াবা লুটকারিদের আইনের আওতায় আনা। সে মোতাবেক অভিযান চলমান রয়েছে।

সূত্রমতে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাটস্থ আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটিতে মাছ ধরা ট্রলারে করে ইয়াবার একটি বিশাল চালান খালাস হয়। ইয়াবার চালানটি জেটি দিয়ে কূলে তোলার সময় স্থানীয় টেকপাড়া এলাকার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তার বাহিনী ইয়াবা চালানটি লুট করে।

মিজানের নেতৃত্বে তার বাহিনীতে ওই সময় ছিল তার আপন ছোট ভাই কায়সার, যে জেটি দিয়ে ইয়াবা খালাস হয় ওই জেটির মালিকের ছেলে মুজিব, ইফতেখার খান বাবু, সাইফুল, জুনায়েত, নাছির মিয়া, ভুলু মিস্ত্রি, বাদশা, তানবিরসহ আরও কয়েকজন।

এ দিকে ইয়াবা লুটের সময় জেটিঘাটে ইয়াবার মালিক বোরহান, তার ভাই শহীদ তাদের পার্টনার সাইফুল ও আবুল কালামের সঙ্গে লুটকারি মিজান বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইয়াবার মালিকরা।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার এই বিশাল চালানটি আসে কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনালস্থ লারপাড়া এলাকার টাইলস ব্যবসায়ী বোরহান, শহীদ, সাইফুল ও আবুল কালাম ওরফে বড়দার কাছে। এর মধ্যে শহিদ ও বোরহান হলেন আপন সহোদর। তারা লারপাড়া এলাকার মোক্তার মেম্বারের ছেলে।

প্রথমে ইয়াবার চালানটি টেকনাফে বুঝে নেয় ইয়াহিয়া নামে এক ব্যক্তি। পরে সেখান থেকে সাগরপথে এসে বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাট এলাকার আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটিঘাটে খালাস হয়। মিয়ানমার থেকে যে ট্রলারে করে ইয়াবার চালানটি আসে সেখানে নেতৃত্ব দেয় একজন রাখাইন যুবক। তার সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকজন মাঝিমাল্লা।

সূত্র জানিয়েছে, এই চালান ছাড়াও আরও বেশ কয়েকবার এই ঘাট দিয়ে ইয়াবার চালান শহরে ডুকে। মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ী বোরহান ওই এলাকার জয়নাল সাওদাগরের মেয়ে বিয়ে করে ইয়াবা ব্যবসার আস্তানা তৈরি করে এ এলাকায়।

পাশাপাশি নিজের ভাইসহ পার্টনার নেয় কক্সবাজার শহরের আলীরজাহাল এলাকার সাইফুলকে। সাইফুল ওই এলাকার এক জনপ্রতিনিধির প্রশ্রয়ে থেকে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার থেকে সাগরপথে ইয়াবা পাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবার নিরাপদে ইয়াবা পাচার হলেও এবার সাইফুলের শ্যালকের কারণে লুটের ঘটনা ঘটে। কারণ ছিনতাইকারী ও ইয়াবা লুটকারি মিজানের অন্যতম সহযোগী ইফতেখার খান বাবু হলেন সাইফুলের শ্যালক। সেই সুবাদে সাইফুলের ইয়াবার চালান আসার ব্যাপারে সমস্ত খবর ছিল বাবুর কাছে।

ইয়াবা লুটের ঘটনাস্থলের দোকানদাররা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, দিনে-দুপুরে এত বড় ইয়াবার চালান লুটের পর এখনও অপরাধীরা ধরা পড়েনি। যা হাস্যকর। কারণ তাদের মধ্যে অনেকেই এখনও এলাকায় রয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু কায়সার খালিদ জানান, প্রবাদে আছে পুলিশ চাইলে সব পারে। কিন্তু এটা কেন পারছে না। মনে হয় থানা পুলিশ ইয়াবা উদ্ধার ও ইয়াবা লুটকারিদের ধরতে চাইছে না।

এ দিকে শহরের বাঁকখালীস্থ যে ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত শহরে ইয়াবা ডুকে(মাঝিরঘাটস্থ আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটি) সেই ঘাটের মালিক আবু ছৈয়দ দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। পাশাপাশি তার ছেলে মুজিব ইয়াবা লুটের ঘটনায় লাপাত্তা রয়েছেন।

স্থানীয়দের মতে, ইয়াবা লুটে নেতৃত্ব দেয়া মিজান একজন পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী। তাছাড়া প্রতিনিয়ত বাঁকখালী নদীতে বিশেষ করে কস্তুরাঘাট, মাঝিরঘাট ও এসএমপাড়া এলাকায় ট্রলার থেকে নিয়মিত ইয়াবা ছিনতাই করে মিজানের নেতৃত্বে একটি অস্ত্রধারী চক্র। ইয়াবা ছিনতাই করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মিজান। দখল করেছেন বাঁকখালী নদী থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত বিশাল প্যারাবন। বানিয়েছেন অপরাধের সাম্রাজ্য।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন, ইয়াবা লুটের ঘটনার পর থেকে পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে এনে অবশ্যই ইয়াবার সঙ্গে এবং লুটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঠকের মতামত: