কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

পানি সংকটে দুশ্চিন্তায় কৃষক

উখিয়ায় ৩ হাজার চাষী বুকে ছুরি মেরে অবৈধ বালু উত্তোলন

বিশেষ প্রতিনিধি::

অনুমতি ছাড়াই কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পশ্চিম ডিগলিয়া রাবার ড্যাম স্থাপিত খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বর্তমানে বালি উত্তোলনের কারণে বন্ধ আছে রাবার ড্যাম। বাঁধ দিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্থানীয় অন্তত ৩ হাজার চাষী। তবে এ চক্রের সদস্যরা এসিল্যান্ডের অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করলেও প্রশাসন বলছে, অনুমতি নেই।

ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চক্রের অন্যতম হলেন পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জাহেদ, মঞ্জুর ও আব্দু নবী টুনু সহ একটি প্রভাবসালী সিন্ডিকেট।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম ডিগলিয়া রাবার ড্যাম-সংলগ্ন খালটিতে বালির ইজারা হয়নি। সেখানে আইনত বৈধভাবে বালি উত্তোলনের কোনো অনুমোদন নেই।

বালি উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জাহেদ বলেন, ‘আমরা এসিল্যান্ডের অনুমতি নিয়ে বালি উত্তোলন করছি। আমাদের কাছে লিখিত কাগজ আছে।’

আরও জানা গেছে, উখিয়ার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমদের স্বাক্ষরিত ৭ শর্তযুক্ত একটি অনুমতিপত্রকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে ওই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। গত ২৯ অক্টোবর সেটি প্রকাশ করা হয়।

সরকারি ওই অনুমোদনপত্র সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের উপ-প্রকল্পের আওতাধীন খালে স্থাপিত রাবার ড্যাম অবকাঠামোর ডাউন স্ট্রিম অংশে ৫০ মিটার, আপ স্ট্রিম অংশে ২০০ মিটার এবং ১, ২, ৩ নম্বর এলএলপি সেচযন্ত্রের বেইজ অংশে ১০০ মিটার ভরাট হয়ে যাওয়া পলি ও কাদা মাটি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে অপসারণের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেন এবং লিখিত অনুমোদন দেন সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমদ।

অনুমতিপত্রের ৭ শর্ত ছিল পলি ও কাদা মাটি অপসারণের সময় রাবার ড্যামের ক্ষতি করা যাবে না এবং অন্য স্থান থেকে মাটি অপসারণ করা যাবে না; দুই ফুটের অধিক বালি বা কাদা মাটি অপসারণ করা যাবে না; অপসারণের যাবতীয় ব্যয় পশ্চিম ডিগলিয়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি বহন করবে; অপসারিত-উত্তোলিত পলি ও কাদা মাটি স্তুপ করে বিধিমোতাবেক সরকারি রাজস্ব প্রদান করে অন্যত্র সরানোর বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উখিয়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন (বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা সংশোধন আইন-২০২৩-এর ৭ (১) (২) ধারা মতে); পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না; অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে মাটি অপসারণ করতে হবে এবং কোনো শর্ত লঙ্ঘিত হলে এ অনুমতিপত্র কোনো নোটিশ জারি ব্যতীত তৎক্ষণাৎ বাতিল বলে গণ্য হবে।

এদিকে বেঁধে দেওয়া সময় পার হওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। সকল শর্ত লঙ্ঘিত করছে বালিখেকোরা।

ওই অনুমোদনপত্র পাইয়ে দিতে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতা বাবদ ৩ লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কীভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারীন তাসনিম তাসিন বলেন, ‘এই তথ্য আগে পাইনি। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সেখানে বালি উত্তোলনের অনুমতি নেই।’

প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে, কে কোন দিকে দখল করছে, বালি উত্তোলন করছে হিসেব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন ইউএনও যোগদান করলে সব অসঙ্গতি নিয়ে কাজ করা হবে।

পাঠকের মতামত: