কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম স্টেশন কোর্টবাজার, মরিচ্যা, উখিয়া দারোগা বাজার, কুতুপালং, বালুখালি, থাইংখালী ও পালংখালী বাজারে৷ বিশেষ করে কোট বাজার স্টেশনে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে৷ উপজেলার জালিয়াপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং ও রাজাপালংসহ মোট চারটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল হওয়ার কারণে এই স্টেশনটি ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে।
তার মধ্যে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সেবায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার গাড়ির চলাচলের চাপ তো আছেই। তাছাড়া রয়েছে ইনানী ও টেকনাফগামী পর্যটকবাহী অসংখ্য গাড়ির চলাচল রয়েছে এ সড়কে।
কিন্তু সড়ক ও জনপদ বিভাগের এবং ফুটপাত দখল করে ভাসমান দোকান বসিয়ে এক শ্রেণির নামধারী জমিদার হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাছাড়া এই স্টেশনে যানজট সমস্যা যেন নিত্যকার চিত্র। ফুটপাতের পাশাপাশি মূল সড়কের এক তৃতীয়াংশ এলাকা দখলে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে প্রশস্ত সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় জনসাধারণের বিড়ম্বনা বেড়েছে পদে পদে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
রাস্তার ওপরে ভাসমান দোকানগুলোতে চুলা বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা, পেঁয়াজু-শিঙাড়া-পুরিসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। বিক্রি হচ্ছে আপেল, কমলাসহ নানা ধরনের ফল। রয়েছে ভাসমান বাদাম ও কাপড় বিক্রির দোকান। রাস্তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়ে বসেছে এসব দোকানপাট। ফলে হেঁটে চলাচলের সময়ও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ পথচারীরা।
জসিম উদ্দিন নামের এক পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফুটপাত দিয়েও হাঁটা যায় না। রাস্তা দিয়েও হাঁটা যায় না। সড়ক দখল করে দোকান বসিয়ে সাধারণ পথচারীদের ক্ষতি করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করেন তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার গাড়ি চালক শাহাদাত হোসেন বলেন, সড়কের ওপর দোকান বসানোর কারণে নিয়মিত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জরুরি রোগী বাহি অ্যাম্বুলেন্স ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকতে হয়। সড়কের ওপর অসংখ্য গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ অবৈধ গাড়ি পার্কিংকে দায়ী করেন তিনি।
আকবর আহাম্মদ নামের আর এক পথচারী বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গায় ও রাস্তার উপর ভাসমান দোকান বসানোর কারণে অসংখ্য মানুষ দোকানের চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকে, চলাচলে অসুবিধা হয় প্রতিনিয়ত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ স্টেশনটি যানজট লেগে থাকে। সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে পারেনা।
কোটবাজার স্টেশনের ফুটপাতের পান ব্যবসায়ী আঞ্জু মিয়া জানান, সড়কে দোকান বসানোর কারণে সিএনজি ও অটোরিকশার লাইনম্যানকে প্রতিদিন টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে তারা গাড়ি পার্কিং করে রাখে। আবার স্থানীয় জমিদারকেও মাসিক টাকা দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতে দোকান করা আর এক ব্যবসায়ী জানান, মার্কেটে সামনে রাস্তায় দোকান বসানোর কারণে মার্কেটের পরিচালককে টাকা দিতে হয় প্রতিমাসে। তাছাড়া বাজারের ইজারাদারকে প্রতিদিন টাকা দিতে হয়।
উখিয়া কোর্টবাজার স্টেশনের ইজারাদার মকবুল হোসাইন মিথুন বলেন, আমি বাজারের মূল ইজারাদার হলেও সাব ইজারাদারগণ বাজারে টাকা তুলেন। খোঁজ খবর নিয়ে কোথাও অনিয়ম হলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেন তিনি।
বাজার ইজারাদারদের একাংশের দায়িত্ব থাকা ভুট্টো নামের এক ব্যবসায়ী নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ইজারাদার মিথুনের নাম বলেন, তবে কোর্টবাজার স্টেশনকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে, আলাদা আলাদা কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান ভুট্টো। সড়কের টাকা তুলার দায়িত্বে তিনি আছেন বলে স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করেন তিনি।
উখিয়া কোর্টবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উখিয়া একটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা। তাই এখানে চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন এনজিওর আনাগোনা বেশি। ফুটপাত ও সড়কের ওপর দোকান বসানোর বিষয়টি দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অতীতের সকল ইউএনওকে লিখিতভাবে বলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ফুটপাত দখল করে যারা অবৈধ স্থাপনা ও ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বহুবার অভিযানও পরিচালনা করেছিলো প্রশাসন। কিন্তু পরে এই ভাসমান দোকান গুলো পুনরায় বসানো হয়। শুধু দোকান নয় সড়কের ওপর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী নেতা। পুনরায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গায় এবং ফুটপাতের ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশন (ভূমি) যারীন তাসনিম তাসিন বলেন, ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ভাসমান দোকান ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি। জড়িত অবৈধ ব্যবসায়ীদের আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত: