কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে স্থানীয়দের মধ্যে এইডস সংক্রমণ বেড়েছে তিন গুন

  • ২০১৫-২২ সাল পর্যন্ত রোহিঙ্গা রোগী ৬১২, বাংলাদেশি ৯৮
  • সর্বশেষ ২ বছরে রোহিঙ্গা রোগী ৬৫১, বাংলাদেশি ৩১২ জন
  • হোটেল-মোটেলে রোহিঙ্গা তরুণীরা, অনিরাপদ মিলনে বাড়ছে ঝুঁকি

কক্সবাজারে এইডস রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭ বছরের তুলনায় গত দুই বছরে এই সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বড় অংশ উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা। এ ছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে এই সংক্রমণ বেড়েছে তিন গুণ।

এইডস রোগীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও এবং চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে রোহিঙ্গা তরুণীদের। তাঁদের সঙ্গে অনিরাপদ মিলনে বাড়ছে সংক্রমণ। এতে করে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে পূর্ববর্তী দুই বছর তিন মাসে জেলায় ৩১২ জন স্থানীয় বাসিন্দার এইচআইভির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৭ বছরে ৭১০ জন এইডস রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬১২ জন, আর বাংলাদেশি ৯৮ জন। তবে পরবর্তী ২ বছর ৩ মাসে এই সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ৯৬৩ জন। তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬৫১ জন। এই সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে। এই সংখ্যা ৩১২। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, পূর্ববর্তী ৭ সাত বছরের তুলনায় গত দুই বছরে স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমণ তিন গুণ বেড়েছে। এই পরিসংখ্যান প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন,

‘কক্সবাজারে এইচআইভি আক্রান্তের হার বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। গত দুই বছরে এই হার আগের ৭ বছরের দ্বিগুণের বেশি।’

এদিকে প্রথম সাত বছরে এইডসে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ১১৮ জন। তাদের মধ্যে ৬১ জন রোহিঙ্গা, বাকি ৫৭ জন স্থানীয়। আর সর্বশেষ দুই বছরে ১০৮ জন এইডস রোগী মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৮৬ জন রোহিঙ্গা, বাকি ২২ জন স্থানীয়।

চিকিৎসা ও সেবাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর কক্সবাজারে এইডস রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এইচআইভি বিস্তারের প্রধান কারণ, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসচেতনতা ও অনিরাপদ যৌন মিলন। তবে এইচআইভি নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত রয়েছে। তাঁরা অনিরাপদভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াচ্ছেন। এ ছাড়া শহরের লালদীঘির পাড়কেন্দ্রিক কিছু আবাসিক হোটেলেও যৌনকর্মীর অবাধ বিচরণ রয়েছে। তাদের অনেকে এইচআইভি বহন করছে, তবে তারা এটা জানেই না।’

এই পরিস্থিতি মোকাবিলা প্রসঙ্গে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা ভূঁইঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, মিয়ানমার এইডস রোগের জন্য একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তিনি বলেন, আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে এ রোগের সংক্রমণরোধে সচেতন করা হচ্ছে; পাশাপাশি স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে মেলামেশা থেকে বিরত থাকতেও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় এইচআইভি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ চলমান বলেও জানান তিনি।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, ‘এইচআইভি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রচার, কাউন্সেলিং ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা দেওয়া এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’ আজকের পত্রিকা

পাঠকের মতামত: