কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

উখিয়া ইনানী রেঞ্জের বনজসম্পদ বিলুপ্তির পথে, সর্বত্রে চলচে পাহাড় কেটে দালান নির্মাণ

এম ফেরদৌস, উখিয়া::

বনাঞ্চল ও বনভুমি রক্ষার্থে সরকারের আলাদা ভাবে একটি বনবিভাগ অধিদপ্তর থাকলেও তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হয় এসব রক্ষা তো দুরের কথা ধ্বংস করতেই কাজ করে যাচ্ছে দায়িত্বে থাকা সেক্টরটির বিভিন্ন রেঞ্জের কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে উখিয়া ইনানী রেঞ্জের আওয়াতাধীন রাজাপালং বিটে ঘুরে দেখা যায় বনাঞ্চল উজাড় করে বিশাল পাহাড় কেটে গড়ে উটতেছে বহুতল ভবন। পাহাড় বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ রক্ষার সামাজিক বনাঞ্চল গুলো।

শুধু তাই নই, পাহাড়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বিশাল বিশাল পাহাড় এখন সমতল ভূমিতে পরিনত করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী পাহাড় খেকোরা। সমতল করা জায়গায় আবার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে দেদারসে । ইনানী রেঞ্জের রাজাপালং বিটে দায়িত্বে থাকা বিট কর্মকর্তা মনিছুর রহমান রহস্যজনকভাবে নিরব ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। এসবের সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না এ দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তারাও।

সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, ইনানী রেঞ্জের আওয়াতাধীন রাজাপালং বিটে তুতুরবিল এলাকার খাইরুল হক ইনানী রেঞ্জে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে বনবিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ভবন নির্মাণ করতেছে। এ বিষয়ে খাইরুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান এটি খতিয়ানভুক্ত জায়গা। এদিকে স্থানীয়রা বলছেন এই মৌজায় খতিয়ানভুক্ত কোন জায়গা নেই সব পিএপ জায়গা। ফরেস্টর ও খাইরুল হক মিলে মানুষকে বোকা বানাতে এসব ভুয়া খতিয়ান দেখাচ্ছে। ট্রেস-ম্যাপ দেখে পরিমাপ করলে এ জমির আসল মালিকানা বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন সচেতনমহল।

একই এলাকার মোহাম্মদ হোসেন বিশাল পাহাড় কেটে রাতারাতি বহুতল দালান নির্মাণের কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। দায়িত্বরত বনকর্মকর্তারা দেখেও না দেখান মতো এসব এড়িয়ে যাচ্ছে রহস্যজনকভাবে। এসব দালান নির্মাণে ফরেস্টর কর্তৃক কোন বাধা বা নিষেধ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ হোসেন জানান, বিট অফিসার এসে প্রথমে বাধা দিয়েছিল, শুনতেছি মামলাও নাকি দিয়েছে। আমি আমার উপরের মহলের সাথে কথা বলে এ কাজ করতেছি।
এখানেই শেষ নই,একই বিটে ঘোনার পাড়া এলাকার নাগু মাস্টার ও শামশুল আলম বনবিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রাতারাতি বাড়ি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা দায়িত্বরত বিট কর্মকর্তাদের জানালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মামলা দেয়া হয়েছে বলে জানান সাংবাদিকদের। এদিকে স্থানীয়দের প্রশ্ন এই বিটে শত শত একর বনভূমির জমিতে অবৈধভাবে দালান ঘর নির্মাণ কারীদের মামলা দেওয়ার কথা শুনলেও কোনদিন এসবের উচ্ছেদ অভিযান না হওয়াতে মামলা নামক মিথ্যা নাটকের অবসান ছেয়ে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয় সচেতন ব্যাক্তিরা।

এছাড়া রাজাপালং বিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের নাকের ডগায় বনবিভাগের জায়গায় ভুমিদস্যুরা বিশাল দালান তৈরিসহ বিভিন্ন খামার গড়ে তুললেও তাদের বিরুদ্ধে বনবিভাগের কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

স্থানীয়সুত্রে জানা যায়, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ইনানী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিটকর্মকর্তারা টাকার লোভে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করতে পরস্পর যোগসাজশে। তারা সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে সরকারি বনসম্পদ ধ্বংস করে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে সরকারি বনভুমির জায়গাকে বৈধতা দিচ্ছে। না হলে এই এরিয়াতে বিশাল বনভূমির জায়গা প্রায় অবৈধ দখলদারদের হাতে হওয়ার কথা না । এত বড় বড় পাহাড় বিলীন হয়ে গেছে এখনো অনেক পাহাড় বিলীন হওয়ার পথে এসবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন। দেশে চারদিকে লুটপাটকারী। যে যার মতো লুটপাট করে যাচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই।

উখিয়ার এক পরিবেশবাদীর নেতা জানায়,উখিয়া ও ইনানী রেঞ্জে বনাঞ্চল প্রায় বিলুপ্তির পথে। পাহাড় কেটে দালান নির্মাণ তো নিত্যদিনের ঘটনা। বনভূমি দখল ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে কোন সাংবাদিক বা পরিবেশবাদীরা যদি বনবিভাগকে অভিযোগ দেয় দখলদারদের বিরুদ্ধে একটা করে মামলা ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাড়ি নির্মাণ কাজ চলমান থাকে। উচ্ছেদ অভিযান হয় না। এই মামলা তাদের কাছে বনবিভাগের জায়গা গিলে খাওয়ার জন্য অনেকটা সার্টিফিকেট হিসাবে অর্জন করা হয় বলে মন্তব্য করেন তারা।

এব্যাপারে জানতে বিট কর্মকর্তা মনিছুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নতুন স্থাপনা ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। আমার বিটে বনভূমির জায়গায় যারা নতুন দালান নির্মাণ করতেছে সবার বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ইনানী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিনের সাথে এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ( ডিপো) সরোয়ার আলম জানায় পাহাড় নিধন করে দালান নির্মাণকারীদের তথ্য গুলো দেন এ বিষয়ে বনবিভাগ সবসময় কঠোর রয়েছে। অভিযান চলচে চলতেই থাকবে। তাদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

পাঠকের মতামত: