কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে কক্সবাজারের রিপা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে শাহেদা আক্তার রিপা। একসময় যার নাম কেবলমাত্র স্থানীয় মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, আজ সেই নাম গোটা দেশকে আলোড়িত করেছে। নারী ফুটবলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ক্রীড়াজগতে নতুন তারকা হয়ে জন্ম নিয়েছেন তিনি। দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধকতা এবং সমাজের কঠিন বাধা পেরিয়ে রিপা আজ বাংলাদেশের গর্বে পরিণত হয়েছেন।

রিপার শৈশব কেটেছে দারিদ্রতায়। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না কখনোই। তবুও মা–বাবা, বড় ভাই কখনোই রিপাকে থেমে যেতে দেননি। খেলার প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে রিপা এগিয়ে গেছেন। গ্রামের রীতি–নীতির কারণে মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলা চালিয়ে যাওয়ায় ছোটবেলা থেকেই তাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, কিন্তু কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি।

গত শুক্রবার রিপার গ্রামের বাড়ি উখিয়া উপজেলার সোনাই ছড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের সামনে বড় ফুটবল মাঠ। সেখান থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করে আজ রিপা নারী ফুটবল তারকা। প্রতিবেশীরা মাঠের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললেন, এই মাঠেই আমাদের রিপা খেলতো, খেলার সঙ্গী হিসেবে কাউকে না পেলেও একা একা চর্চা করত।

রিপার বাবা জালাল আহমদ বলেন, রিপার সাফল্যে শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, প্রতিবেশী ও এলাকার মানুষরাও আনন্দিত। তার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান শিক্ষক সানাউল্লাহ ও শামশুল আলম সোহাগের। প্রতিবেশীদের দোয়া, আন্তরিক ভালোবাসা ও উৎসাহ রিপাকে আজ এতদূর পর্যন্ত যেতে সহযোগিতা করেছে। প্রতিবেশী মোহাম্মদ সৌরভ হোসাইন বলেন, আমাদের গ্রামের মেয়ে দেশের হয়ে নেপালে খেলতে গেল, তাও আবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মতো বড় আসরে। এটি গ্রামবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর। প্রথম প্রথম সে যখন মাঠে খেলতে যেত অনেকেই অনেক কথা বলত। ‘মেয়ে কেন ছেলেদের খেলা খেলবে, ছেলেদের মতো দৌঁড়াবে, হেনতেন।’ এসব তোয়াক্কা না করে রিপা নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল। আজ সে সফল। রিপার বড় ভাই ফারুক হোসাইন বলেন, আদরের বোন রিপাকে এ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পথ সহজ ছিল না। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শুরু থেকে ফুটবলে তার দক্ষতা, অদম্য আগ্রহ আর শূন্য থেকে একে একে সফলতা রিপাকে জাতীয় দলে নিয়ে গেছে। মা–বাবা, শিক্ষক–আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতা ছিল। আমরাও জানতাম না আসলে ফুটবলে নারীদের একটা ভবিষ্যৎ আছে। তা প্রমাণ করে দিয়েছে কলসিন্দুরের তহুরা, মারিয়া, সানজিদা, শামসুন নাহাররা। তাদের খেলা দেখে স্বপ্ন জাগে আমাদের রিপাও একদিন জাতীয় দলের হয়ে দেশের জন্য খেলবে। দেশের ফুটবলকে রাঙাবে। সেই অদম্য স্পৃহা থেকে হাল ছাড়িনি। আজ রিপার খেলা দেখতে গ্রামবাসীর আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। আমার কাছে তারা জিজ্ঞেস করে রিপার খেলা কবে দেখা যাবে। এই বিষয়গুলো খুবই ভালো লাগে। তখন মনে হয় আমাদের কষ্ট সার্থক হয়েছে। কঙবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন, রিপার এই অর্জন বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। সাফল্যের এই গল্পটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ যেকোনো বাধাকে জয় করতে পারে।

পাঠকের মতামত: