কক্সবাজারে দিন দিন রক্ষিত এবং সংরক্ষিত বনভূমি দখলের ঘটনা ঘটছে। দখলকৃত এসব জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘর-বাড়ি, খামার ও মার্কেট। এ পর্যন্ত জেলায় ৪৭,৯১৪ দখলদারের হাতে ধ্বংস হয়েছে ২৫০০৭.৬৯ একর বনভূমি। আর সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে বন্দোবস্ত ও রোহিঙ্গাদের জন্য ধ্বংস করা হয়েছে আরও ২৪৩৫১.৮৪ এরক বনভূমি। সবকিছু মিলে কক্সবাজারে মোট বনভূমির ৩৯ শতাংশের অধিক বনভূমি ধ্বংস হয়েছে।
রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, বনদস্যু ও প্রভাবশালীরা এসব দখলবাজিতে জড়িত। প্রকাশ্যে দখলের ঘটনা ঘটলেও বন রক্ষায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি বন বিভাগ। তবে বন বিভাগের দাবি, অতীতে যা দখল হয়েছে তা উদ্ধারের পাশাপাশি অবশিষ্ট বন রক্ষায় সচেষ্ট রয়েছেন তারা।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগে রক্ষিত ও সংরক্ষিত মিলে মোট বনভূমি রয়েছে ১২৫২৫৬.৭৭৩৯ একর। যেখানে সংরক্ষিত বন ১ লাখ ৯৫০.৮৪৪ এবং রক্ষিত জমি ২৪২২৯.৩২ একর। মোট জমি থেকে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে ৪৭৮৭.৮৪ একর। আর ৪৭,৯১৪ জন দখলদার গিলে খেয়েছে ২৫০০৭.৬৯ একর। এ হিসেবে বনবিভাগের মোট ৪৯৩৫৯.৫৩ একর জমিই ধ্বংস হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বনভূমি দখল হলেও তা রক্ষায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। বরং নীরব ভূমিকা পালন করছে বনবিভাগ। দিন দিন বনভূমি ধ্বংস হওয়ার ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তু সংস্থা। যার প্রভাব পড়ছে প্রতিবেশের উপর। অব্যাহত বন উজাড় হওয়ায় বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের অনুপাত বেড়ে বৈশ্বিক উষ্ণাতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, বনভূমি ধ্বংস হওয়ার কারণে দিন দিন বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। বাড়ছে দুর্যোগ। এ অবস্থায় বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করে বনায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাবেক সভাপতি ফজলুল কাদের বলেন, শিল্পায়নের এ যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাতাসে বাড়ছে কার্বনের পরিমাণ। এরইমধ্যে বাংলাদেশে দিন দিন বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কক্সবাজার রক্ষা করতে বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধার করে বনায়ন সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেদখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়ে গেল ২২ ফেব্রুয়ারি ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। জমি উদ্ধার করে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগের দাবি, বনভূমি উদ্ধার নিয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সভাও করেছে বন বিভাগ। তবে, লোকবল সংকটের কারণে বনভূমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সরওয়ার আলম বলেন, ৪০ শতাংশ জনবল সংকট রয়েছে আমাদের। তাই বিশাল বনভূমি রক্ষা করা আমাদের জন্য কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি বেদখল হওয়া সব জমি উদ্ধারের। ১০০ দিনের কর্মসূচিতে আমরা ৮ হাজার একর জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে জমি উদ্ধারে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দখলদারের বিরুদ্ধে ১৩১টি মামলা করা হয়েছে। আমরা ১৫ হাজার একর জমি উদ্ধারের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ধীরে ধীরে বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাহিদ ইকবাল বলেন, বন বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী বনভূমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সুত্র: কালবেলা
পাঠকের মতামত: