কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অপসারণের ৪৮ ঘন্টা আলটিমেটাম

উখিয়ায় বালু-পাহাড় কাটা বন্ধ না করে উচ্ছেদের নামে ভাঙছে ঘরবাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক::

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটা বন্ধ না করে উচ্ছেদ অভিযানের নাম দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালীর এক হাজারের বেশি এলাকাবাসী৷

গত মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের যৌথ অভিযানে জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী এলাকায় ৮ টি বসতঘর উচ্ছেদ করার প্রতিবাদে বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী এসব কথা বলেন৷

ছবি সাফফাত ফারদিন রামিম চৌধুরী

৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ব্যারিস্টার সাফফাত ফারদিন রামিম চৌধুরী বলেন, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি মনখালী বিট কর্মকর্তা শিমুল দত্ত ও হোয়াইকং রেঞ্জ কর্মকর্তা মিনার চৌধুরীকে অপসারণ করা না হয় তাহলে রেঞ্জ অফিস ও কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের অফিস ঘেরাও করা হবে৷

তিনি আরও বলেন, এক দেশে দুই আইন চলতে দেওয়া হবে না। ফ্যাসিবাদের গডফাদারেরা বনবিভাগের জায়গায় অট্টালিকা, মার্কেট, ওয়্যারহাউজ নির্মান করে কোটি টাকার বাণিজ্য করবে আর অন্যদিকে বনবিভাগ উখিয়ার সাধারণ ভূুমিহীন জনগণকে শীতের রাতে ঘর ভেঙ্গে দিয়ে বিনিদ্র রাত্রি যাপন করাবেন তা আমরা মেনে নিতে পারিনা। পুনর্বাসন ব্যাতিত উখিয়ার কোনো জনসাধারণকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

এসময় বক্তারা আরও বলেন, মনখালী এলাকায় শত বছর ধরে বসবাস করে আসছি। রয়েছে সুপারি বাগান কলাবাগান সহ নানা ধরনের গাছ গাছালি। বনবিভাগ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সবগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। সমতল ভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা মানুষ কেন নিজের ঘর সংস্কার করতে পারনেনা এমন প্রশ্ন করেন বনবিভাগকে।

মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, গত আওয়ামী লীগ আমলে প্রতিটি ঘরের জন্য ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার অধিক টাকার লেনদেন হয়েছে স্থানীয় বনবিভাগের দালালের মাধ্যমে। বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এই বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত। এরপরেও তাঁরা এখন এসে আগাম নোটিশ ছাড়া উচ্ছেদের নামে আমাদের ঘরবাড়ি সবকিছু ভেঙে চুরমার করে গেছে৷

উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশ উপস্থিত ছিলেন, জুহুর আহমদ চৌধুরী, সেলিম সিরাজী, রফিকুল হুদা, আরফাত চৌধুরী, সাঈদ উদ্দিন রুবেল, আনোয়ার সিকদার, আব্দুল মাবুদ, হাফেজ আবদুল করিম, আবদুল মাবৃদ, মোহাম্মদ আলম, হাফেজ আবদুল করিম, আবদুল মাবৃদ, মোহাম্মদ আলম সহ এলাকার ছেলে মেয়ে শিক্ষার্থী শিক্ষক ও সমাজের প্রতিনিধি সহ প্রায় দুই হাজার এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন৷

এদিকে পাহাড় কাটা হচ্ছে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের দৌছড়ি এলাকার মিজানুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বনবিভাগের পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেললেও বনবিভাগের চোখে পড়েনি৷

অন্যদিকে কুতুপালং পিএফ পাড়া এলাকার খোকন বড়ুয়ার নেতৃত্বে সুমন বড়ুয়া সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে প্রায় এক একর পাহাড় কেটে তৈরি করছে বিলাসবহুল বাড়ি৷ এসব বাড়ি নির্মাণের কাজ ও পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ না করে অভিযানের নামে নিরীহ মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে বনবিভাগ৷

উখিয়া সদর পাতাবাড়ি এলাকায় বনবিভাগের জায়গায় সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে তৈরি করেছে ডুপ্লেক্স বাড়ি। এলাকাবাসীর অভিযোগ মোটা অঙ্কের টাকা দিলে সবকিছু সম্ভব। হতদরিদ্র মানুষ যদি টিনের বাড়িও করে তাঁকে উচ্ছেদের নামে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করা হয়৷ যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা দেওয়া হয়নি ততক্ষণে পর্যন্ত৷

তবে একটি সূত্র বলছে, চাহিদা মতো টাকা পেলে চোখ বন্ধ থাকে উখিয়া রেঞ্জ, ইনানী রেঞ্জ ও হোয়াইক্যং রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা৷

এবিষয়ে হোয়াইক্যং রেঞ্জ কর্মকর্তা মিনার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগে কোনো নোটিশ করা হয়নি তবে এটি নিয়মিত অভিযান বলে জানান৷ আমাদের অভিযান আরও হবে৷ এটি সরকারি বনবিভাগের জায়গা। সরকারি ভাবে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে এসব উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ এখানে কাউকে আঘাত করা হয়নি৷

উখিয়া সহকারী কমিশনার ভূমি যারীন তাসনিম তাসিন জানান, সরকারি বনভূমি দখল করে স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে৷ এছাড়া উখিয়া উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত বালু ও পাহাড় খেকোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে৷ আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে৷

পাঠকের মতামত: