রোহিঙ্গা যুবক সাহাব উদ্দিন (২৪) বিয়ে করেছেন বাংলাদেশি নারী খুরশিদা আক্তারকে। তাদের ঘরে জন্ম নিয়েছে দুই সন্তান। স্ত্রী ভোটার হয়ে গেলেও দুই সন্তান ও নিজের জন্মনিবন্ধন বানানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রোহিঙ্গা স্বামী সাহাব উদ্দিন। সূত্র বলছে স্থানীয় চৌকিদার ও মেম্বারের মদদে ওই রোহিঙ্গা ভোটার হতে সবধরনের সহযোগিতা করেছেন কিন্তু শেষমেশ চেয়ারম্যানের হাতে ধরা খেয়েছে ওই রোহিঙ্গা।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে এসে জালিয়াতি করা কাগজপত্রসহ চেয়ারম্যানের হাতে ধরা পড়েন এই রোহিঙ্গা নাগরিক।
চলমান ভোটার তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রমের ব্যস্ততার সুযোগে স্বাক্ষর নেওয়ার এই চেষ্টা চালান বলে জানিয়েছেন রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান।
চেয়ারম্যান বলেন, চাচি শাশুড়িকে মা বানিয়ে কৌশলে বাংলাদেশি নাগরিক বনে যেতে চেয়েছিলেন রোহিঙ্গা সাহাব উদ্দিন। কাগজপত্র দেখে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাদের দুজনকে আটক করা হয়।
এ সময় জব্দ করা ফাইলে রোহিঙ্গা নয় মর্মে প্রত্যয়নপত্র, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রত্যয়ন, রাজাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যয়নপত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পাওয়া যায়। প্রত্যেকটিতে স্বাক্ষর দেখা যায়।
খবর নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী খুরশিদা আক্তার রাজাপালং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পুকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিমের মেয়ে। বেশ কয়েকবছর আগে তাদের বিয়ে হয়। মা পরিচয় দেওয়া চাচি শাশুড়ির নাম খুরশিদা বেগম। তিনি একই এলাকার মৃত জাফর আলমের স্ত্রী।
জন্মনিবন্ধনের আবেদনপত্রে ব্যবহার করা হয় সাহাব উদ্দিনের শ্যালক সাইফুল ইসলামের ফোন নম্বর। তার মাধ্যমেই এত কাগজপত্র জোগাড় করেন বলে জানা যায়।
রোহিঙ্গা সাহাব উদ্দিনের ভাষ্যমতে, তার জন্ম বাংলাদেশে। বিয়ে করে সংসারও পেতেছেন এখানে। রাজাপালং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দরগাহবিলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকবাল বাহারের সহযোগিতায় বসবাস করছেন। কয়েক যুগ আগে মিয়ানমার থেকে সাহাব উদ্দিনের পরিবার বাংলাদেশে আসে বলে দাবি তার।
এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য ইকবাল বাহারের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে পুরাতন কাগজপত্র দেখে সন্দেহ হয়। পরে সাহাব উদ্দিন রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন। এ সময় তার মা সেজে আসা এক মহিলাকে আটক রাখা হয়। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ছলচাতুরী করে সব স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু স্বাক্ষর জালিয়াতি দাবি করেন তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, ২০২০ সাল থেকে একটি একটি করে নথি জোগাড় করেন তারা। তদানীন্তন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বাক্ষর ও তারিখ দেখে সেটিই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান চৌধুরী বলেন, উখিয়ার অসাধু লোকজন যতদিন ভালো হবে না, ততদিন রোহিঙ্গারা বিভিন্ন উপায়ে ভোটার হওয়ার সুযোগ নেবে। তাই স্থানীয়দের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। যাদের আটক রাখা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: