খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেছেন, বর্তমানে দেশে এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ পরিমাণ চালের মজুত রয়েছে। তারপরেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চাল আমদানি বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে দেশে আমন আবাদ কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং টিসিবির কার্ডধারীদের মধ্যে চাল ও আটা বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথাগুলো করেন।
সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বোরো সংগ্রহ অভিযানে সোমবার পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। চালের এ মজুত এ যাবৎ কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সংগ্রহ অভিযান আরও দুই দিন ( মঙ্গলবার ও বুধবার) চলবে। এই দিনে লক্ষ্যমাত্রার বাকি ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়ে যাবে। বাজারে কৃষকরা এবার ধানের দাম ভালো পাওয়ায় ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক পূরণ হয়েছে। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কৃষকরা যাতে বাজারে ধানের ভালো দাম পায়। সেই লক্ষ্যও আমাদের পূর্ণ হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, শুধু চাল মজুত নয়, অন্যান্য খাদ্য মজুতের ক্ষেত্রেও ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গম মজুতের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা ছিল, সেটাও কেটে গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ইতোমধ্যে গম আমদানির ব্যবস্থা হয়ে গেছে। মানুষের কষ্ট লাগবের জন্য ওএমএসের ডিলার প্রায় তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের হিসাবের বাইরে হঠাৎ করে চালের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়ে যায়। এতে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। মানুষের এ কষ্ট লাগবের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে এক যোগে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু থাকবে। আগে সারা দেশে ৮১৩টি ওএমএস কেন্দ্র চালু ছিল। এবার সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৬৩টি করা হয়েছে। আগে একজন ওএমএসের একজন ডিলার এক টন চালের বরাদ্দ পেতেন। এখন প্রত্যেক ডিলার দুই মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাবেন। এছাড়া সিটি শহরগুলোতে ট্রাক সেলে সাড়ে ৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাবেন। ওএমএসের মাধ্যমে বিতরণ করা প্রতি কেজি চালের মূল্য হবে ৩০ টাকা। ওএমএস কেন্দ্রে টিসিবি কার্ডধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। টিসিবি কার্ডধারীরা কার্ড দেখিয়ে এবং সাধারণ মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে মাসে দুই বার ৫ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন। এক ব্যক্তি যাতে বার বার চাল কিনতে না পারেন সেটা নিশ্চিত করা হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যে চাউলগুলোর অর্ডার দিয়েছি সবগুলোই যে আসবে আমরা আশা করি না। যার কারণে বেশি করে চালের অর্ডার দেয়া হয়। দেশে মোটা চাউল আসে না। চিকন চাউল গুলোই সাধারনত আসে। আাদানিশুল্ক যখন ২৫ শতাংশ ছিল তখন কিন্তু ৫০ মেট্রিক টন চাল দেশে এসেছে। অর্ডার দেয়া হয়েছিল প্রায় ১৪লাখ মেট্রিক টন। কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন ভারত থেকে খরচ দিয়ে আমাদের চাউল থেকে প্রতি কেজি দুই টাকা বেশি পড়ে যায়। এর জন্য আনে নাই। আশা করি আরও ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে দেয়ায় কেজিতে প্রায় পাঁচ টাকা কম আসবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে ৫০ লাখ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে। প্রতিটি পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে একবার ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবে। লক্ষ্যমাত্রার ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ যাচাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে বাকি ২০ শতাংশ পরিবারের যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হবে। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সুবিধাভোগী প্রত্যেক পরিবারকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে। এর ফলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতেও কেনো অনিয়মের সুযোগ থাকবে না।
চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে ইতোমধ্যে চালের দাম নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, তেলের দাম কমানো, ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর ফলে কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে চালের দাম সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে।
পাঠকের মতামত: