‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে কক্সবাজারে আনন্দমুখর পরিবেশে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো আঞ্চলিক গণিত উৎসব শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয়।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় গণিত উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে প্রথম আলো কক্সবাজার বন্ধুসভা।
এর আগে গণিত উৎসবে অংশ নিতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয় কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৯২ শিক্ষার্থী। প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি—এই চার ক্যাটাগরিতে ভাগ হয়ে কক্সবাজার আঞ্চলিক পর্বে অংশ নেওয়া এসব শিক্ষার্থী এর আগে অনলাইনে গণিত উৎসবের বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে আঞ্চলিক পর্বের পরীক্ষায় বসে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসেন তাদের অভিভাবকেরা।
উৎসবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উত্তরণ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এ কে ফজলুল করিম চৌধুরী। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন।
উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের গণিতচর্চার বিকাশ ঘটবে, তাদের মেধার বিকাশ ঘটবে। ভবিষ্যতে তারা এই গণিতচর্চা, যুক্তি, বুদ্ধি ও চিন্তার মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ গড়বে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুল কুদ্দুস। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উত্তরণ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এ কে ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামমোহন সেন, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা মোর্শেদা আইভি, কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রমজান আলী। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তিসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘কক্সবাজার ও বান্দরবানের শিক্ষার্থীরা এই আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অংশ নিচ্ছ। বান্দরবান ও কক্সবাজার আমার খুব প্রিয় জায়গা। এখানে শৈশব কেটেছে। অপূর্ব সুন্দর জায়গা। জাতীয় সংগীত অসম্ভব ভালো লাগে। কোনো চাপ নেই। উপভোগ করো। এখানে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। প্রতিযোগিতা করতে হলে নিজের সঙ্গে করো।’
কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উত্তরণ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এ কে ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের গণিতের ভীতি দূর করতে হবে। কক্সবাজার শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে। এই গণিত উৎসবের মাধ্যমে গণিতজ্ঞ বেরিয়ে আসবে।’
কক্সবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘গণিতভীতি মেয়েদের বেশি, ছেলেদের কম। আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি মাকে। এ জন্য মাকে আমরা ভয় পাই না। তেমনি গণিতকে ভালোবাসলে ভীতি চলে যাবে।’
কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামমোহন সেন বলেন, গণিতভীতি দূর করার বড় উদ্যোগ গণিত উৎসব। গণিত হলো সভ্যতার প্রবেশদ্বার। গণিতচর্চার মাধ্যমে চিন্তার জগৎকে শাণিত করতে হবে।
কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রমজান আলী বলেন, ‘দেশের গণমাধ্যমের মধ্যে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে প্রথম আলো সেরা। যোগ্য প্রতিভার সব ইভেন্ট প্রথম আলো সৃষ্টি করেছে। এ জন্য আমরা প্রথম আলোকে ভালোবাসি। গণিত উৎসবের মাধ্যমে আমরা কিছু যুক্তিবাদী মানুষ সৃষ্টি করব।’
উদ্বোধনের পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিদ্যালয়ের ছয়টি কক্ষে গণিতের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষার পর থাকবে প্রশ্নোত্তর পর্ব। পাশাপাশি চলবে খাতা মূল্যায়নের কাজ। খাতা মূল্যায়ন শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। লিখিত পরীক্ষায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের ঢাকায় জাতীয় গণিত উৎসবে যোগ দেওয়ার সনদ, চিঠি ও টি-শার্ট দেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: